ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নেপথ্যে কিছু এনজিও এবং উর্দুভাষী নেতা ;###;ক্যাম্পগুলো ভয়াবহ মাদকের আখড়া

চলছে অর্থের খেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

চলছে অর্থের খেলা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশে আটকেপড়া উর্দুভাষী অবাঙালীদের নিয়ে অর্থ ও রাজনীতির খেলা বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। সর্বশেষ আদালত কর্তৃক ক্যাম্পে বসবাসরত জাতীয় পরিচয়পত্রধারী উর্দুভাষী অবাঙালীদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেয়ার পরও থেমে নেই খেলা। নেপথ্যে কাজ করছে কয়েকটি এনজিও এবং কতিপয় উর্দুভাষী অবাঙালী নেতা। পুনর্বাসিত হলে তাদের ব্যবসা মাঠে মারা যাবে। নির্ঘাত হাতছাড়া হয়ে যাবে বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকা। শুধুমাত্র স্বার্থগত কারণেই যুগের পর যুগ জিইয়ে রাখা হয়েছে ‘বাংলাদেশের ক্যান্সার’ হিসেবে পরিচিত উর্দুভাষী অবাঙালীদের সমস্যা। আদালতের নির্দেশের আগে থেকেই সরকার উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আদালতের নির্দেশের পর এই প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়েছে। একই সঙ্গে জোরদার হয়েছে স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতা। মুখে বললেও ক্যাম্পে তৎপর থাকা এনজিও এবং ক্যাম্পের নেতৃবৃন্দ বাস্তবে সব সময়ই উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসনের বিপক্ষে। ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে রাখতে অত্যন্ত কৌশলে যুগের পর যুগ ধরে চালানো হচ্ছে নানা তৎপরতা। কোন কোন এনজিও তাদের নামের সঙ্গে প্রভাবশালী দেশের নামও জুড়ে দিয়েছে। ঝামেলা এড়িয়ে অপতৎপরতা জোরালোভাবে চালাতেই এমন অপকৌশল নিয়েছে তারা। ক্যাম্পকে ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের অপতৎপরতা। বিশেষ করে এনজিও, বিভিন্ন সেবা সংগঠন, দাতব্য সংস্থা, মাদক ব্যবসায়ী, পেশাদার অপরাধী, জমির দালাল, ভূমিদস্যুসহ নানা ধরনের লোকের আনাগোনা রয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। ক্যাম্পগুলোতে ভয়াবহ আকারে মাদকের ব্যবহার হচ্ছে। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ছে ক্যাম্পের আশপাশের এলাকাগুলোতেও। সস্তায় অতিসহজেই মাদক পাওয়া যাওয়ার কারণে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমান অবস্থা ॥ সরেজমিন মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের একাধিক ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। যারা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান তারা ক্যাম্প ছেড়ে আশপাশের এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। অনেকেই বাঙালী মেয়ে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। তাদের সন্তানাদি এ দেশের স্কুল-কলেজে পড়াশোনাও করছে। ভাল ভাল চাকরিও করছেন অনেকে। ক্যাম্পকে ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের অপতৎপরতা। বিশেষ করে এনজিও, বিভিন্ন সেবা সংগঠন, দাতব্য সংস্থা, মাদক ব্যবসায়ী, পেশাদার অপরাধী, জমির দালাল, ভূমিদস্যুসহ নানা ধরনের লোকের আনাগোনা রয়েছে ক্যাম্পগুলোতে। ক্যাম্পগুলোতে ভয়াবহ আকারে মাদকের ব্যবহার হচ্ছে। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ছে ক্যাম্পের আশপাশের এলাকাগুলোতেও। সস্তায় অতিসহজেই মাদক পাওয়া যাওয়ার কারণে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সরকারবিরোধী অপতৎপরতা ॥ ক্যাম্পগুলোতে জাল টাকা ও মাদক ব্যবসা ছাড়াও বোমা তৈরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- চলে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে শাহীন ও নাদিম নামে দু’জন আহত হয়। আহত দু’জন ছাড়াও আহত নাদিমের ভাই বশিরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের তথ্যমতে বোমা তৈরি করে মজুদ রাখা ১শ’টি বোমা উদ্ধার হয়। পরদিন ২১ ডিসেম্বর র‌্যাব-২-এর একটি দল জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আরেকটি বোমা তৈরির কারখানা থেকে ৩২টি তাজা বোমা ও বোমা তৈরির সময় ব্যবহৃত মুখোশসহ বেশকিছু সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ক্যাম্পের বোমা তৈরির কারখানায় বহুদিন ধরে বোমা তৈরি হচ্ছিল। তৈরিকৃত বোমাগুলো সরকারবিরোধী নানা নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে। নানা কারণেই বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ক্যাম্প উচ্ছেদে তৎপরতা চালায়। কিন্তু সেসব তৎপরতা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন ও মামলা থাকায় কার্যকর হয়নি। আদালতের রায় ॥ ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী অবাঙালীদের উচ্ছেদের আশঙ্কা থেকে ২০০২ সালে উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহাবিলিটেশন মুভমেন্টের সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কু ও শহীদ আলী বাবুল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সাল থেকে তাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযান চালালেও মানবেতরভাবে জীবনযাপন করা উর্দুভাষী অবাঙালীদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সরকারের তরফ থেকে। রিট আবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অনেক ক্যাম্পে অমানবিক জীবনযাপন করছেন প্রায় চার লাখ উর্দুভাষী অবাঙালী। ২০০২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরশেন মিরপুরের ছোট-বড় অনেক ক্যাম্পে বিনা নোটিসে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করে। উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। তখন হাইকোর্ট ক্যাম্পে বসবাসরতদের পুনর্বাসন বা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তীতে ক্যাম্পে বসবাসরতদের উচ্ছেদ নিয়ে আরও আটটি মামলা হয়। গত ২৮ মার্চ এসব রিট ও মামলার ওপর একত্রে শুনানি শুরু হয়। গত ২৯ মার্চ বিচারপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচাপতি জেবিএম হাসানের ডিভিশন বেঞ্চ রিট আবেদনগুলো খারিজ করে পর্যবেক্ষণসহ রায় দেন। রায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোর বাইরে অবৈধভাবে বসবাসরত উর্দুভাষী অবাঙালীদের উচ্ছেদের রায় দেয়া হয়। আর ক্যাম্পে বসবাসরতদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী, তাদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করতে বলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমন রায়ে ক্যাম্পে বসবাসরতরা খুশি। তবে ভেতরে ভেতরে খুশি হতে পারেননি উর্দুভাষী অবাঙালীদের নেতা ও এনজিওগুলো। কারণ এমন রায়ের ফলে এনজিওগুলোর ব্যবসা আর উর্দুভাষীদের নেতাদের বাড়তি রোজগার মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
×