ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

পুলিশকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের বন্ধু হতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

পুলিশকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের বন্ধু হতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই পুলিশ বাহিনীকে অসহায় মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হবে, যেন মানুষ ভরসা পায়। পুলিশের হাতে সম্প্রতি দুই সরকারী কর্মকর্তা নির্যাতিত হওয়ার ঘটনায় সমালোচনার মধ্যেই সরকারপ্রধানের এই তাগিদ এলো। মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই বাহিনীর কাজের ব্যাপ্তি বাড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। তাই আমরা পুলিশে আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাত বছরে আমরা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৭৩৯টি ক্যাডার পদসহ ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করেছি। এ সত্ত্বেও দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। তাই আমরা আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে ২৭৭টি ক্যাডার পদসহ ১৩ হাজার ৫৫৮টি পদে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এসব করতে গিয়ে অনেক সময়ই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৬ বীর সদস্য জীবন দিয়েছেন। যার মধ্যে ২১ পুলিশ সদস্য। তাদের পেট্রোলবোমায় ২৩১ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এক হাজার ১৮০ জন আহত হয়, ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল ও ৮টি লঞ্চে তারা আগুন দেয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারী অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং আগুনে পুড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক কর্মসূচী রুখতে সুদৃঢ় ও সাহসী ভূমিকা রেখেছিল পুলিশ। পুলিশের কর্মক্ষেত্র ও কর্মব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেবল চুরি-ডাকাতি মোকাবেলায় নয়, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক ও চোরাচালান রোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধে পুলিশ যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আরও শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণ থেকে একটি অংশ এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশী শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। আপনাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষ একটি জিনিস চায়। তারা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে, চোর বদমাইশ, গু-া, দুর্নীতিবাজ যেন তাদের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক’। বঙ্গবন্ধুর সেই বক্তব্য মনে রেখে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। প্যারেডে নেতৃত্ব দেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। বাংলাদেশে এই প্রথম একজন নারী পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিলেন। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য এই পারেডে অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা একাত্তরের ২৫ মার্চ রাজারবাগে পাকিস্তানী বাহিনীর হামলায় শহীদ পুলিশ সদস্যের এবং মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র, আইনের শাসন রক্ষার জন্য এ আত্মত্যাগ বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের এই অবদান চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেনÑ কিন্তু পুলিশ বাহিনীর ওপর বার বার আঘাত আসে। গত বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের মধ্যে দেশজুড়ে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আমি আবারও ধন্যবাদ জানাই। বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক কর্মসূচীর বিরুদ্ধে আপনারা সুদৃঢ় এবং সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে পুলিশ ও জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করার কথা বলেন। জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পুলিশের ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তন করেছি। পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, বিশেষায়িত ইউনিট গঠন, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির যে ধারা আমরা সূচনা করেছি, তা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত রাখা হবে। পুলিশ সপ্তাহে ২০১৫ সালে অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০২ পুলিশ সদস্যকে পদক প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১৯ পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’, ২৩ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা’ ও ৪০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ এ চার ধরনের পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের পদক পরিয়ে দেন। এর মধ্যে কয়েক পুলিশকে মরণোত্তর পদক প্রদান করা হয়। মরণোত্তর পদকপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কষ্টের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সান্ত¡না দেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পুলিশ লাইন্সে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। প্যারেড ময়দানে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানান পুলিশ সদস্যরা। সালাম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী খোলা জীপে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত ১৩টি কন্টিনজেন্টের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
×