ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালে কমিশনের আইনী দুর্বলতার সমালোচনা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৮ জুন ২০১৫

ট্রাইব্যুনালে কমিশনের আইনী দুর্বলতার সমালোচনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের মামলা পরিচালনায় অনেকটাই দুর্বল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির কর্মকাে ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি তাদের নিয়োজিত আইনজীবীদের মামলা পরিচালনায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ ধরনের মামলায় সিনিয়র আইনজীবী প্রয়োজন বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর। ফেসবুক ও ব্লগে শেয়ার কেনাবেচা সংক্রান্ত মিথ্যা ও প্রতারণামূলক তথ্য প্রচারের দায়ে মাহাবুব সারোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। ওই মামলার (পুরনো মামলা নম্বর ৭২০৭/২০১০, নতুন মামলা নম্বর ১৭/২০১৫) বৃহস্পতিবার বাদীপক্ষের (বিএসইসি) সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে না আনায় সমালোচনা করে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পুরানা পল্টনের হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বেলা ১১টায় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিএসইসির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী হাসিবুর রহমান দিদার। অপরদিকে আসামীপক্ষে সাক্ষীকে জেরা করেন সিনিয়র আইনজীবী টি এম আকবর। বিচার কার্যক্রম চলাকালে বিএসইসি ও আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক হুমায়ুন কবীর বলেন, মামলা পরিচালনায় বিএসইসির অনেক গাফিলতি ও ঘাটতি রয়েছে। এভাবে মামলা পরিচালনা করা যায় না। বিএসইসির পক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসসই) সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) খায়রুজ্জামানের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বিচারক বলেন, এ মামলায় আইনজীবীদের অনেক গাফিলতি আছে। তা না হলে কীভাবে সাক্ষ্য দিতে হয়, তা সাক্ষী আগেই জানতেন। খায়রুজ্জামানের সাক্ষ্যগ্রহণকালে আদালতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় বিচারক হুমায়ুন কবীর বলেন,আপনি কী করেন? কী ওকালতি শিখে এসেছেন? আমার মনে হয় এ ধরনের মামলা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র আইনজীবী লাগবে। সাক্ষীকে উদ্দেশ করে বিচারক আরও বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার নিয়ম যদি আইনজীবী জানতেন তাহলে আপনাকে (খায়রুজ্জামান) জানিয়ে দিতেন। আপনাদের আইনজীবী মামলা তো পরিচালনা করতে জানেনই না, নিয়মকানুনও জানেন না। মামলা পরিচালনায় বাদীপক্ষের আইনজীবীর গাফিলতি রয়েছে- এমন মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর। এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে বিএসইসির আইনজীবী হাসিবুর রহমান দিদার বলেন, বিএসইসির পক্ষে যে সব নথি আদালতে জমা দেয়া হয়েছে তা আমরা পেয়েছি। নথি জমা দেয়ার সময় যদি ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের কী করার আছে?’ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেছেন মামলা পরিচালনায় বিএসইসির অনেক গাফিলতি রয়েছে। এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক (আইন) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বিচারক এ ধরনের কথা বলেছেন আইনজীবীর গাফিলতির কারণে। তারা নথিপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে এমনটি হতো না। এদিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ডিএসইর সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) খায়রুজ্জামান বলেন, আমি ডিএসইতে চাকরিকালে মাহাবুব সারোয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। কিন্তু ওই সময়ে আসামির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল তা আদালতে সাক্ষী দেয়ার আগে আমার জানা ছিল না। আমাকে সাক্ষী দেয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগে বিএসইসির আইনজীবীর পূর্ণাঙ্গ নথি সরবরাহ করা উচিত ছিল। এ জন্য আসামিপক্ষের জেরার উত্তর দিতে আমার কষ্ট হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আসামিপরে আইনজীবী টি এম আকবরের তিনজন সাক্ষীকে জেরাকালে বলেন, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে ফেসবুক ও ব্লগে শেয়ার কেনাবেচা সংক্রান্ত মিথ্যা ও প্রতারণামূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য বিএসইসি ও ডিএসইর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটির প্রতিবেদনে মাহাবুব সারোয়ার কবে বা কখন শেয়ার কেনাবেচা সংক্রান্ত মিথ্যা ও প্রতারণামূলক তথ্য প্রচার করেছেন তার সুনির্দিষ্ট সময় বা তারিখ উল্লেখ করা নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে আমার মক্কেলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে তার কর্মকাণ্ডে কোন বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কিনা, প্রতিবেদনে তার প্রমাণ নেই। এছাড়া মাহাবুব সারোয়ার যে অভিযুক্ত তার প্রমাণস্বরূপ অন্য কোন বিনিয়োগকারীর জবানবন্দী প্রতিবেদনেনেই।
×