ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংতার কারণে মঞ্চনাটকের দর্শক তুলনামূলক কম ॥ গোলাম কুদ্দুছ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সহিংতার কারণে মঞ্চনাটকের দর্শক তুলনামূলক কম ॥ গোলাম কুদ্দুছ

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অনেক অজানা তথ্য নিয়ে এবার একুশে বইমেলায় ‘ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে তাঁর লেখা একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ সম্পর্কে গুণী এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা হয়। বইমেলায় প্রকাশিত আপনার বই সম্পর্কে বলুন... গোলাম কুদ্দুছ : ‘ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ নামের এ বইটিতে আমি বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এরমধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে যেগুলো সম্পর্কে অনেক পাঠক এখনও জ্ঞাত নয়। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বাংলা ভাষার অপরাপর ভাষা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা লাভ হয়েছে। এ লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের দেশের লেখক, শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকরা। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর তৎকালীন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করে বাংলা কিভাবে রাষ্ট্রভাষায় মর্যাদা লাভ করে তার বিস্তারিত বিবরণ আমার এ গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭, ৪৮ ও ৫২ সালে কারা অভ্যন্তরে ও বাইরে থাকাকালীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার দালিলিক তথ্য গ্রন্থটিতে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এই গ্রন্থে ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ সালাউদ্দিনের নামও তথ্য প্রমাণ করা হয়েছে, গুলিতে যাঁর মাথার খুলির মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল। মোটকথা ভাষা আন্দোলনের অনেক অজানা তথ্য ৬৭০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পাঠকদের ইতিহাস সম্পর্কে এক নতুন খোরাক যোগাবে। ৯৫০ টাকা মূল্যের এ বইটি প্রকাশ করেছে নালন্দা প্রকাশনী এবং এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন অশোক কর্মকার। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এবারের একুশের অনুষ্ঠান কেমন হলো? গোলাম কুদ্দুছ : সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এবারের একুশের অনুষ্ঠানমালাকে তা-বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আগুন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি আমরা। এ রকম সন্ত্রাস ইতিপূর্বে স্বাধীন বাংলাদেশে হয়নি। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার এ সন্ত্রাস সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। তাই আমাদের এবারের সেøাগান ছিল ‘বুকের খুনে যুদ্ধ জারি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’। পুরো অনুষ্ঠানমালা জুড়ে আমাদের যে গান, নাটক, আবৃত্তি পরিবেশিত হয়েছে তার সবই এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য। নাট্যান্দোলনের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বলুন... গোলাম কুদ্দুছ : নাট্যান্দোলন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেই চলছিল। প্রতিনিয়ত নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল নাট্যোৎসব। কিন্ত সম্প্রতি বিভিন্ন রকম সহিংস ঘটনার ফলে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন মিলনায়তনে দর্শক তুলনামূলক কম। নিরাপত্তার কারণে অনেকে সপরিবারে নাটক দেখেতে হলে আসতে পারছেন না। আপনার নাট্যসংগঠন পদাতিকের সাম্প্রতিক কর্মকা- বিষয়ে জানতে চাই? গোলাম কুদ্দুছ : সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে নাটক মঞ্চায় করে যাচ্ছি। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানে আমাদের সংগঠনের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়েছে ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। আগামীতে আমরা নতুন নাটকের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। জোটের আগামী পরিকল্পনা কী? গোলাম কুদ্দুছ : সবে শেষ হলো একুশের অনুষ্ঠানমালা। তবে এ মাসের শেষের দিকে সকল ধারার সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে দেশে চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচী থাকবে। একজন সংস্কৃতিসেবী হিসেবে আপনার অপ্রাপ্তির কথা বলুন... গোলাম কুদ্দুছ : এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির চেয়ে সমষ্টিগত অপ্রাপ্তির কথা যদি বলি তাহলে বলা যায়Ñ যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম যে আমাদের দেশ হবে সোনার বাংলা, কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেখতে পাচ্ছি যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থান। এসব অপশক্তি আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে। গণতান্ত্রিক চাদর গায়ে দিয়ে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দল এ সব অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এটা আজকের দিনের বড় অপ্রাপ্তি। -গৌতম পাণ্ডে
×