
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে শেরপুর জেলা কারাগারে হামলায় ৫১৮ বন্দি পালিয়ে যাওয়ার এক বছর পার হলেও এখনও অধরা রয়েছেন ৩ শতাধিক আসামি। পলাতকদের মধ্যে রয়েছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মামলার দাগি আসামি। অন্যদিকে ওই হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও কিছু মালামাল ও অস্ত্র উদ্ধার হলেও গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি।
জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের চূড়ান্ত দিনে দুর্বৃত্তরা শেরপুর জেলা কারাগারে হামলা চালায়। ওই সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে কারাগারের ৯টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪ রাউন্ড গুলি এবং শটগানের ৩৩৬ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। এই সুযোগে সাজাপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন গুরুতর মামলার ৫১৮ বন্দি পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলার লিপি রাণী সাহা সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় গণবিজ্ঞপ্তি। ওই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আসামি থানায় ও আদালতে আত্মসমর্পণ করে এবং র্যাব তালিকা অনুযায়ী পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। তবে শেরপুর জেলা কারাগার অচল থাকায় গ্রেফতারকৃতদের জামালপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এই অবস্থায় আসামি আনা-নেওয়ার ঝুঁকির কারণে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শেষে দীর্ঘ ৪ মাস পর কারাগারের কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
এ সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তে লুট হওয়া বেশ কিছু মালামালসহ সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলেও আজও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতার পরও এক বছর পেরিয়ে গেলেও পলাতক আসামিদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই এখনও অধরা। দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, পালানো ৫১৮ জন আসামির মধ্যে প্রায় ২ শতাধিককে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকিরা এখনো পলাতক।
শেরপুর জেলা কারাগারের জেলার মুহাম্মদ আব্দুস সেলিম বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে কারাগারে হামলার সময় ৫১৮ আসামি পালিয়ে যায়। কারাগারের রেজিস্টার অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৪৫ জনকে পাওয়া গেছে। কিছু আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেও সে তথ্য তার জানা নেই।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, পলাতকদের মধ্যে যারা পুলিশ বা র্যাবের মাধ্যমে গ্রেফতার হয়ে আদালতে হাজির হয়েছে, তাদের তথ্য জানা রয়েছে। তবে আদালতে আত্মসমর্পণকারী বা জামিনপ্রাপ্তদের বিষয়ে তার কাছে তথ্য নেই।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পলাতকদের মধ্যে অনেকে তৎকালীন আন্দোলনকারী এবং বিএনপি-জামায়াতের দলীয় নেতা-কর্মী ছিলেন। পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হলে তারা আত্মসমর্পণ করেননি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বেশ কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, কারাগারে হামলার ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিককে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সজিব