ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নোয়াখালীতে ৮ জুলাই আন্দোলনের সূচনা শহীদ হন ২৬ জন

শাহাদাৎ বাবু

প্রকাশিত: ০০:১৭, ১ আগস্ট ২০২৫

নোয়াখালীতে ৮ জুলাই আন্দোলনের সূচনা শহীদ হন ২৬ জন

জুলাই আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখে নোয়াখালীর ছাত্র-জনতা

বদলে দেওয়া ইতিহাসে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নোয়াখালীসহ দেশের শহীদ যোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পাওয়া অতটা সহজ ছিল না। সেদিনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে গর্বিত অংশীদার ছিল মুক্তিকামী নোয়াখালীর বিপ্লবী ছাত্র-জনতারা, এ অঞ্চলের অন্যান্য জেলার চেয়েও আন্দোলন-সংগ্রামে কয়েক ধাপ এগিয়েছিল নোয়াখালী জেলার ছাত্র-জনতা।

শুধু নোয়াখালীতেই নয়, আন্দোলন-সংগ্রামে দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নোয়াখালীর বিপ্লবী ছাত্র জনতা যে যেখানে ছিল সেখানেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যে কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নোয়াখালীর বীর সন্তানরা সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে শহীদ হয়েছিল ২৬ জন। নোয়াখালীতে দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ৮ জুলাই।
শহরের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল মূলত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজ, সোনাপুর ডিগ্রী কলেজ, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ, নোয়াখালী পাবলিক কলেজসহ জেলা শহর ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে প্রত্যেকেই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

যার যার অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে অন্যতমরা ছিলেন: ফরহাদুল ইসলাম (নোয়াখালী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী), আরিফুল ইসলাম (নোয়াখালী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী), বনী ইয়ামিন (নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী), মুনতাহার প্রীতি (ম্যাটস শিক্ষার্থী), জাহিদুল ইসলাম (নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী), সুমাইয়া আক্তার ( নোয়াখালী সরকারি কলেজ), মাহমুদুল হাসান আরিফ (নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী), মুজাহিদ মিজান ( নোয়াখালী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী), শিহাব উদ্দিন মাহি (নোয়াখালী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী), মেহেদী হাসান (নোয়াখালী সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী), মোহাম্মদ মেহেদী (নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী), হাসিবুল হাসান (নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী) প্রমুখ।
বিভিন্ন ব্যানারে, বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন উপায়ে এই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। নোয়াখালীর রাজপথে দল-মত, ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধে উঠে সকল পেশার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের একাগ্র অংশগ্রহণে আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। ৮ জুলাই স্বল্প সংখ্যক বিপ্লবীদের নিয়ে ফরহাদুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীতে আন্দোলনের সূচনা হয়। একইভাবে ১০ জুলাই শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়।

১২ জুলাই বিক্ষোভ মিছিলগুলোতে ক্রমশ ঝাঁকে ঝাঁকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই দিনে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাহিদের স্লোগানে স্লোগানে নোয়াখালীর রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। ১৪ জুলাই সম্মিলিতভাবে পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়। উল্লেখযোগ্য হারে নারী বিপ্লবীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ১৬ জুলাই আবারো বিক্ষোভ মিছিল হয়। এদিন সারাদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আবু সাঈদসহ ৬ জন আন্দোলনকারী শহীদ হয়। তাদের স্মরণে
১৭ জুলাই নোয়াখালীতে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলে অংশ নেয় ছাত্র-জনতা। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৯ জুলাই ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এর পরের সময়টাতে দিশেহারা তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার ১৯ জুলাই মধ্যরাতে পুরো দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। যা ছিল ১৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম কারফিউ।

২৯ জুলাই আবারো বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। ৩১ জুলাই পালন করা হয় গধৎপয ভড়ঃ ঔঁংঃরপব কর্মসূচি। জুলাই শেষ করে ১ আগস্টের প্রথম দিবসে হয় জবসবসনবৎরহম ঃযব ঐবৎড়বং কর্মসূচি। নোয়াখালীর রাজপথ তখন উত্তপ্ত। বিপুল সংখ্যক বিপ্লবীদের অংশগ্রহণে ২ আগস্ট গণ-মিছিলে উত্তাল নোয়াখালী। একইভাবে ৩ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল মিছিলে রাজপথ প্রকম্পিত করে প্রতিবাদী সমাবেশে যোগ দেয় মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা।

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টুর নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী অগ্নিদগ্ধ কার্যালয়ে এসে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে হুংকার ছুঁড়ে। শহরের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
কার্যত তখন স্বৈরাচারের ভাগ্যাকাশে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কালো মেঘের ঘনঘটা। এদিকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই বিপ্লবীদের, জুলাই যোদ্ধাদের চোখেমুখে তখন বারুদের আগুন। ৪ আগস্ট ডাক এলো অসহযোগ আন্দোলনের, সেই আন্দোলনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পড়ে, সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে নোয়াখালী। হঠাৎ করে ফুঁসে ওঠে স্বৈরাচারী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

তারা কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করার চেষ্টা করে। বিকেল নাগাদ ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেষে যখন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ি ফিরছিল তখন সার্কিট হাউজ মোড়, হরিনারায়ণপুর মোড়, দত্তেরহাট বাজার, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রোড, মাইজদী বাজার মাস্টার পাড়াসহ প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মোড়ে তল্লাশি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। এবং ঘোষণা দেয় আন্দোলন প্রতিহত করার। শেষ বিকেলে ফাঁকা মাঠে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় শহরের বিভিন্ন দোকানপাটে ও সাধারণ পথচারীদের ওপর। 
এদিকে ঢাকা থেকে আসে লং মার্চের ঘোষণা। টালমাটাল পরিস্থিতি, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কাল রাত্রির ছায়া নেমে আসে শহর জুড়ে। আতঙ্কগ্রস্ত হয় জেলাবাসী। কিন্তু বিপ্লবীরা থেমে থাকে না তারা ৫ আগস্ট দিবসের প্রথম প্রহরে রাজপথে জড়ো হতে থাকে। সকাল দশটার দিকে আওয়ামী এমপি একরামুল করিম চৌধুরী তার কিছু সাঙ্গপাঙ্গো নিয়ে আন্দোলন প্রতিরোধের জন্য শহরের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপস্থিত হয়।

আওয়ামী এমপি আসার খবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শহরে। আন্দোলনকারীরা একরাম চৌধুরীকে ঘেরাও করার প্রস্তুতি নেয়। আন্দোলনকারীদের এগিয়ে আসার খবরে আওয়ামী এমপি একরামুল করিম চৌধুরী দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে, ছাত্র-জনতার মুখোমুখি পড়ে রিভলবার উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি করে তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ জনপদে। মিছিলে মিছিলে রাজপথে জড়ো হতে থাকে সাধারণ মানুষ। লাখো জনতার জনস্রোতে রাজপথ প্রকম্পিত করা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় জেলা শহর।

সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না রাস্তায়। শুধু জেলা শহরে নয় উপজেলা শহরগুলোতেও একইভাবে রাজপথে মুক্তির লড়াইয়ে নেমে এসেছিল প্রতিবাদী মানুষ। ততক্ষণে বুঝতে আর বাকি রইল না যে ছাত্র-জনতার হাত ধরে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নতুন বাংলাদেশ। শুধু অপেক্ষা ঘোষণা আসার। অবশেষে বেলা ৩টায় এলো সেই কাক্সিক্ষত সময়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেল স্বৈরাচারী হাসিনা। আর এভাবেই সারা বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ধরা দেয় বিজয়ের চূড়ান্ত মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে।
ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে থাকবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ক্ষুদ্র আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই রূপ নিয়েছিল সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে।

ছাত্ররা এই আন্দোলন শুরু করলেও এটি তখন আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৬ বছর ধরে অধিকার বঞ্চিত হয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার মুক্তিকামী জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলনে যোগ দেয় জামায়াত, শিবির, বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে করে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ শিক্ষার্থীদের সাহস জোগাতে সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল অভিভাবকরাও। 
এদিকে চূড়ান্ত বিজয়ের পর জেলাজুড়ে উৎসবের আমেজ। মিছিলে মিছিলে জয়ধ্বনি, রাজপথে শোকরানা নামাজ আদায়, কেউ ছিল না ঘরে বসে সবাই তখন রাজপথে, যেন এক মহামিলন মেলা। ঈদের আনন্দের চেয়েও কোনো অংশে কম ছিল না সেদিনের উল্লাস। সন্ধ্যা নাগাদ চলতে থাকে বিজয় মিছিল। শেষ বিকেলে সোনাইমুড়ি উপজেলায় সোনাইমুড়ি থানার সামনে যখন বিজয় উল্লাস করছিল সাধারণ মানুষ, তখন কিছু বিচ্ছিন্ন লোক থানার দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে হঠাৎ করেই থানার ভেতর থেকে তাদের ওপর চালানো হয় গুলি। আর সেই গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন ৩ যোদ্ধা।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সোনাইমুড়ি থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। আরেকটি কথা না বললেই নয়, শেষ মুহূর্তের সোনাইমুড়ি থানার সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা ছাড়া নোয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে আর কোনো উল্লেখযোগ্য ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া বা বাধা-বিপত্তি ও সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তৎকালীন নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ব্যতিক্রমী জেলা হিসেবে পুরো জুলাই জুড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক ছিল সহযোগিতা সুলভ, যা প্রশংসনীয়।
অপরদিকে,জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নোয়াখালী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয় ১৮৯ জন যোদ্ধা এবং যে ২৬ জন শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন: নোয়াখালী সোনাইমুড়ি থানার সামনে শাহাদাত বরণ করেন বেগমগঞ্জের আসিফ হোসেন(২৪), সোনাইমুড়ির মোহাম্মদ তানভীর(২২), সোনাইমুড়ির মোহাম্মদ ইয়াসিন(৩০), সোনাইমুড়ির মোহাম্মদ হাসান(১৮)। ঢাকা বাড্ডা থানার সামনে শাহাদাত বরণ করেন মোহাম্মদ রায়হান (২০), নূর হোসেন পিয়াস (১৯)।

ঢাকা আদাবর থানার সামনে কবিরুল ইসলাম রুবেল(৪০)। ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানার সামনে হাতিয়ার মো. রিটন উদ্দিন(৩২), ঢাকা যাত্রাবাড়ীতে সেনবাগের শাহাদাত হোসেন শাওন(১৪), বেগমগঞ্জের আব্দুল আহাদ কাইয়ুম (১৫), বেগমগঞ্জের ইফাত হাসান(১৪)। ঢাকার মিরপুর ১০এ শাহাদাত বরণ করেন সদরের ফারুক হোসেন(৪০)। ঢাকা জিগাতলায় শাহাদাত বরণ করেন সদরের আব্দুল মোতালেব মুন্না(১৪)। লালদিঘির পাড় চট্টগ্রামে শাহাদাত বরণ করেন নিজাম উদ্দিন ইমন(১৮)।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেগমগঞ্জের মোহাম্মদ সজীব(১৮), ঢাকার বাংলা মোটরে বেগমগঞ্জের বেলাল হোসেন(২৬), ঢাকা উত্তরায় হাতিয়ার মাহমুদুল হাসান রিজভী(২০), ঢাকা সানারপাড় মৌচাক এলাকায় বেগমগঞ্জের মোহাম্মদ রুবেল(৩৪), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগং রোডে সোনাইমুড়ি থানার আরাফাত হোসেন আকাশ(১৫), কুমিল্লার চান্দিনায় বেগমগঞ্জের মো. ফারুক(৪১)। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নোয়াখালী সদরের নাসিমা আক্তার(২৪), সদরের মো. মামুন হোসেন(২৭), চাটখিলের হাসান হাবিব তামিম(১৭), চাটখিলের মো. ইমতিয়াজ হোসেন(২২) ও সোনাইমুড়ি থানার আলমগীর হোসেন শাহাদাত বরণ করেন।
দেশব্যাপী ছোট পরিসরে কোটাবিরোধী মূল আন্দোলন শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের শুরুতে, আন্দোলন যখন জুলাই মাস পার করে টানা পরের মাসের পঞ্চম দিনে পৌঁছলো এবং এদিনেই দেশ থেকে স্বৈরাচার হটিয়ে জুলাই যোদ্ধারা বিজয় নিশান উড়াল তখন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসায় ৫ আগস্টের বিজয়ের তারিখ হয়ে উঠল ‘৩৬ জুলাই’ ( ৩১ জুলাই + ৫ আগস্ট = ৩৬ জুলাই )। ক্ষুদ্র পরিসরের শুরু হয়ে নোয়াখালীসহ ৬৪ জেলার রাজপথের এই আন্দোলন শুধু একটি ফ্যাসিবাদ সরকারের উৎখাতই করেনি।

এটি রক্ষা করেছে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে, ফিরিয়ে দিয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানুষকে রক্ষা করেছে মামলা-হামলা-গুম-খুন ও নির্যাতনের জিম্মিদশা থেকে। এ বিজয় তরুণ প্রজন্মকে করে তুলেছে দৃঢ়-আত্মবিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে করেছিল সমুন্নত। গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে নোয়াখালীতে আন্দোলনের দাবানল ছিল জুলাই যোদ্ধাদের সাহসিকতা আর তেজদৃপ্ততায় ভরা। জুলাইয়ের আন্দোলন বা ২৪ শের গণঅভ্যুত্থান আগামী প্রজন্মের জন্য বড় ধরনের শিক্ষা, এই বাংলার জমিনে দুর্নীতি দুঃশাসন করে কোনো শাসকগোষ্ঠী টিকে থাকতে পারবে না এটাই ছিল জুলাই আন্দোলনের বার্তা।

প্যানেল হু

×