
ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আর যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে হামলা নতুন করে এক কঠিন বাস্তবতা সামনে এনেছে—আসলে চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার তথাকথিত "অক্ষশক্তি" কতটা একজোট?
রাশিয়া যখন ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান, চীন আর উত্তর কোরিয়াকে পাশে পেল, তখন পশ্চিমা দেশগুলো বলেছিল, ‘এক নতুন অক্ষশক্তি’ তৈরি হচ্ছে। ইরান ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে, চীন কিনছে রাশিয়ার তেল। কিন্তু যখন ইরান নিজেই সংকটে পড়লো, তখন আর কেউ পাশে দাঁড়ালো না।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সময়, চীন-রাশিয়া শুধু ‘নিন্দা’ জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। কোনো সামরিক সহায়তা বা জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনায় পরিষ্কার, নিজেদের স্বার্থ ছাড়া এসব দেশ কেউ কারও জন্য যুদ্ধ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের মতো শক্তিশালী সামরিক জোট এদের মধ্যে নেই।
উত্তর কোরিয়া একমাত্র দেশ, যারা রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়েছে এবং ১৪ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে। কিন্তু চীন বা রাশিয়া সরাসরি ইরানকে সহায়তা করতে প্রস্তুত নয়। ইরানের ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থার ওপরও চীন-রাশিয়ার অস্বস্তি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতিন কখনই ইরান-রাশিয়া সম্পর্ককে ইসরায়েল বা আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন না। ইরানকে 'কৌশলগত বন্ধু' হিসেবে ব্যবহার করলেও, প্রয়োজন হলে তাকে 'বলির পাঁঠা' বানাতে রাশিয়া প্রস্তুত।
চীনও একই পথে। ইরান সংকটে যখন যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালো, চীন শুধু ‘কড়া নিন্দা’ করেই থেমে গেছে। তারা চুপচাপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তাদের বড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাই এই অঞ্চল অশান্ত হলে চীনের তেলের আমদানি হুমকির মুখে পড়ে।
চীন আগে ইরান-সৌদি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করেছিল, তখন তাদের প্রভাব ছিল বেশি। কিন্তু এখন ইরান দুর্বল, সিরিয়ায় আসাদ সরকারও উৎখাত হওয়ায় চীন আবার 'অপেক্ষা করে দেখো' নীতিতে ফিরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন-রাশিয়া-ইরান-উত্তর কোরিয়া একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী হলেও, নিজেদের মধ্যে তাদের সম্পর্ক খুবই ঠুনকো। কেউ কারও জন্য যুদ্ধ করবে না।
তবে এটাও ঠিক, চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া-ইরান একত্রে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বের বিরুদ্ধে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। চীন ইরানকে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি দিয়েছে, রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নে সহায়তা করেছে, উত্তর কোরিয়াকে টিকিয়ে রেখেছে।
তবে ইরানের ক্ষেত্রে চীনের আস্থা কম। তারা ইরানকে ‘অবিশ্বাসযোগ্য, সিদ্ধান্তহীন ও অতিরিক্ত সুযোগসন্ধানী’ বলে মনে করে। ইরানও জানে, তারা চীনের ওপর নির্ভরশীল।
যুদ্ধ শেষে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফর করেন চীনে, যা পরিষ্কার করে—যতই দূরে থাকুক, ইরান চীনের দরজায় ফিরে যেতে বাধ্য।
ইরান সংকটে চীন-রাশিয়ার নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে—তথাকথিত অক্ষশক্তি আসলে নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ কারও বন্ধু নয়। যুদ্ধ হলে সবাই ‘দূর থেকে’ দেখতে পছন্দ করে। এই অশান্ত বিশ্বে আসলেই কেউ কারও ওপর নির্ভর করতে পারে না!
আবির