ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

লেম্বুর বন: কুয়াকাটার বুকে এক নিভৃত প্রাকৃতিক স্বর্গ

আবুল হোসেন রাজু, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৭, ২৬ জুন ২০২৫

লেম্বুর বন: কুয়াকাটার বুকে এক নিভৃত প্রাকৃতিক স্বর্গ

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক অপার সৌন্দর্যের নাম ‘লেম্বুর বন’। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘সূর্যাস্ত পয়েন্ট’ নামেও পরিচিত। সবুজে ঘেরা, জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই চর প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক নির্জন আশ্রয়স্থল।

নাম লেম্বুর চর, তবে নেই লেবু গাছ

‘লেম্বুর চর’ নাম থাকলেও এখানে লেবু গাছের কোনো অস্তিত্ব নেই। বরং চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেওড়া, গেওয়া, গোরান, কড়ই, ঝাউগাছ ও গোলপাতার মতো বিভিন্ন বনজ উদ্ভিদ। ধারণা করা হয়, এটি এক সময় সুন্দরবনের অংশ ছিল, যদিও বর্তমানে এটি মূল বনাঞ্চল থেকে আলাদা একটি চর।

প্রায় এক হাজার একর প্রাকৃতিক সম্পদ

প্রায় এক হাজার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই চর তার সবুজ বৃক্ষরাজি ও নির্জন পরিবেশ দিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের মোহিত করে। লেম্বুর চরের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে চোখে পড়ে ঘন সবুজ গাছের সারি, যা প্রকৃতির এক অনন্য উপহার।

সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য

লেম্বুর বনের প্রধান আকর্ষণ নিঃসন্দেহে এর সূর্যাস্ত। সূর্য যখন ধীরে ধীরে সাগরের জলে মিলিয়ে যায়, তখন তার সোনালি আলো ছড়িয়ে পড়ে গাছপালা ও চর জুড়ে। এই দৃশ্য যে কোনো পর্যটকের হৃদয়ে অম্লান ছাপ রেখে যায়।

কীভাবে যাবেন লেম্বুর চরে?

ঢাকা থেকে প্রথমে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শহরে যেতে হবে।
সড়কপথে:

দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুর কারণে এখন মাত্র ৬-৭ ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব।

  • নন-এসি বাস: সাকুরা, শ্যামলী, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস (ভাড়া: ৭৫০–৯০০ টাকা)

  • এসি বাস: গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ (ভাড়া: ১১০০–১৬০০ টাকা)

নদীপথে:

সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী বা বরিশাল, তারপর সড়কপথে কুয়াকাটা।

কুয়াকাটা সৈকত থেকে:

লেম্বুর বন সৈকত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। ইজিবাইক, ভ্যান বা সাইকেলে সহজেই পৌঁছানো যায়।

কোথায় থাকবেন?

সরকারি রেস্ট হাউজ:
এলজিইডি রেস্ট হাউজ, সড়ক ও জনপথ রেস্ট হাউজ, রাখাইন কালচার একাডেমি রেস্ট হাউজ।

বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্ট:
সাগরকন্যা পর্যটন হলিডে হোমস, ইয়ুথ ইন হোটেল, সিকদার রিসোর্ট, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল, হোটেল বিচ হ্যাভেনসহ নানা মানের হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন?

লেম্বুর চর সংলগ্ন ছোট দোকানে কাঁকড়া ভাজি, সামুদ্রিক মাছসহ স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। ভালো মানের খাবারের জন্য জিরো পয়েন্ট এলাকার রেস্টুরেন্টসমূহ: জয় রেস্টুরেন্ট, হোটেল সানরাইজ, বার্মা হোটেল, রামজান রেস্তোরা, অতিথি ও বৈশাখী রেস্টুরেন্ট।

ভ্রমণের সেরা সময়

নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় লেম্বুর চরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময় আবহাওয়া থাকে আরামদায়ক এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় এক অপার্থিব রূপে।

কুয়াকাটার কোলাহল থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত এই লেম্বুর চর যেন প্রকৃতির এক নীরব সাধনা। ঝাউবন, ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, জীববৈচিত্র্য ও সাগরের হিম বাতাস মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে এক অপার প্রাকৃতিক স্বর্গ। প্রকৃতিকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চাইলে একবার ঘুরে আসতেই পারেন লেম্বুর বন থেকে।

মিমিয়া

×