
ছবি: জনকণ্ঠ
প্রকৃতির ভিন্ন রূপ। আষাঢ়ে বৃষ্টি নেই সিলেটে। প্রকৃতির ধারাবাহিকতায় এখন বন্যার মৌসুম। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সিলেটে বন্যাজনিত প্রাকৃতিক আচরণ কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে সর্বদা। ২০২৪ সালের জুন মাসে সিলেট ছিল বন্যার কবলে। এই সময়ে এই আষাঢ় মাসে সিলেট অঞ্চলের মানুষ বন্যার সাথেই বসবাস করে থাকেন। তবে বন্যার আশঙ্কা শেষ হয়ে যায়নি। তিন দিনের বর্ষণেই বন্যা দেখা দিতে পারে। ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল হিসাবেই আবহমানকাল থেকে স্বীকৃত। আষাঢ় মাসে অঝোর ধারায় বর্ষণের কথা থাকলেও সিলেটে উল্লেখযোগ্য বর্ষণ নেই। প্রতিদিনই সিলেট ও আশপাশ অঞ্চলে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি, হালকা বৃষ্টি, কোথাও মাঝারি বা ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েই যাচ্ছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু সে তুলনায় বৃষ্টি ঝরছে না বললেই চলে।
এই মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে এখনো সে অর্থে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয়নি। অথচ বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা এই সিলেট অঞ্চল। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টি ঝরেছে মাত্র ২৯ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি ঝরেছে ৪৩ মিলিমিটার। আকাশে মেঘ ভেসে বেড়ালেও মঙ্গলবার দিন ছিল রোদ্রোজ্জ্বল। এমন প্রেক্ষাপটে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সিলেট অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে বজ্রসহ ভারী, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত।
আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, নানান কারণে পরিবেশদূষণ হচ্ছে, গরম বাড়ছে, সে সাথে অসংখ্য কারণ উল্লেখ হচ্ছে বৃষ্টিপাতের তারতম্যের ক্ষেত্রে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় জানমালের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। সেটাকে সয়ে নিয়েই চলছে জীবনযাত্রা। বিল, হাওড়, বাওড় জলাশয় বানের পানিতে টই টম্বুর হলে মাছের ফলন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পুরো মৌসুম হাঁট বাজারে দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। গ্রাম এলাকার গরিব মৎস্যজীবী ছাড়াও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন হাওড় বাওড় থেকে মাছ ধরে বিক্রি করতে পারেন। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ও পানি ক্ষণস্থায়ী হলে মাছের আকাল তৈরি হয়ে যায়।
গত ১ জুন সিলেটে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ছিল ৪০৪.৮ মিলিমিটার। এরপর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় এবং ৬ ও ৭ জুন যথাক্রমে ৭ ও ১৫.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সামগ্রিকভাবে, ১ থেকে ২৪ জুনের মধ্যে সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, বিশেষ করে ১ জুনে। সিলেটে ২০২৪ সালের জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৮১৮.৪ মিমি, কিন্তু রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৫৬.০২ মিমি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭.৬২ মিমি বেশি। এর মধ্যে, জুন মাসের ১৮ তারিখে একদিনেই সর্বোচ্চ ৩০৩.৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সিলেটে ২০২৩ সালের জুন মাসে মোট ১,৪৫৬.০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮১৮.৪ মিলিমিটার, যার তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ জুন একদিনেই ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা ঐ মাসের সর্বোচ্চ ছিল।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, ২০২২ সালের জুন মাসে বৃষ্টিবহুল দিন থাকার কথা ছিল ২২ দিন, কিন্তু বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮ দিন। এটা অস্বাভাবিক। জুন মাসের ১৮ তারিখ একদিনে সর্বোচ্চ ৩০৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া, ১৭ জুন ১০৯.০৯ মিলিমিটার ও ২৭ জুন ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসে ১৪৫৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা ছিল ৬৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। সেই বছর ২০০৬ সালের জুন মাসে ১২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ২০২৪ সালে সেই রেকর্ড ভেঙে যায়। জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির কারণ হিসেবে বলা যায় যে, এটি মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকে, যা সাধারণত এই সময়ে সক্রিয় থাকে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শহীদ