ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষা উপদেষ্টাকে ক্যাম্পাসে আসার আহ্বান

৩৭ দফা দাবিতে কারমাইকেল কলেজে আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২৪ জুন ২০২৫

৩৭ দফা দাবিতে কারমাইকেল কলেজে আন্দোলন

ছবিঃ সংগৃহীত

রংপুর কারমাইকেল কলেজে একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম, আবাসিক হল নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ, নতুন বিভাগ চালু, যাতায়াতের জন্য বাস সংস্থান, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বক্স স্থাপনসহ ৩৭ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সৃষ্ট সংকট সমাধানে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্বশরীরে কারমাইকেল কলেজে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবারও আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে দাবি আদায়ে আগামীকাল (বুধবার) রেল ও সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গত দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনেও কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

গত সোমবার (২৩ জুন) সকাল নয়টা থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কলেজের প্রধান প্রবেশপথসহ সকল বিভাগ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসনকে ২৫ দফা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো—কলেজের সব খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মানসম্মত অডিটোরিয়াম নির্মাণে পূর্ণ বরাদ্দ নিশ্চিত, কলেজের দখলকৃত জমি উদ্ধার এবং কলেজ চত্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক ফটক নির্মাণ, কলেজের জমি অন্য কোথাও না দেওয়ার লিখিত নিশ্চয়তা, হল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কার, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুমে রূপান্তর, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান ইত্যাদি।

এদিকে দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এবং শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে লিখিত আকারে সব সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। আমরাও চাই দ্রুত দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হোক এবং শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুক। তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষে যে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবো। আর যেসব দাবি আমাদের এখতিয়ার বহির্ভূত, সেগুলো স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, নতুন বিভাগ সংযোজনের প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বাস সংকট, ছাত্রী বিশ্রামাগারের অনুপযুক্ত পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা ও আইসিটি সুবিধার ঘাটতি নিয়ে তারা অবহেলিত থেকেছেন। বারবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বোরহান বলেন, এই আন্দোলন কারো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল কিংবা স্বার্থে হচ্ছে না। এটি কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার বিক্ষোভ। শতবর্ষী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এভাবে পিছিয়ে রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বকুল রায় বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে কলেজের নানাবিধ সমস্যা ও সংকটের কথা প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু আশ্বাস দেওয়া হয় কিন্তু বাস্তবায়নে উদ্যোগ চোখে পড়েনি। একারণে বাধ্য হয়েই সকল শিক্ষার্থী মিলে আন্দোলনে নেমেছি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইমরান, আসাদ, জয়লালা, বাঁধন, নন্দিতাসহ একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বুনছি, যেখানে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। রংপুর আর আগের মতো অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া থাকবে না। তাই ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা কলেজের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট তুলে ধরে আন্দোলন শুরু করেছি। দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শুধু আশ্বাস ছাড়া কোনো বাস্তব সমাধান পাওয়া যায়নি। এবার আমরা আর ছাড় দেব না। উন্নয়নের জন্য আন্দোলন চলবেই। এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে। যদি দাবি আদায়ে কঠোর হতে হয়, প্রয়োজনে তাই করা হবে।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২২ জুন) থেকে কলেজে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি আদায়ে প্রথম দিনে কলেজ রোড লালবাগ এলাকায় রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। কিন্তু গত দুই দিনে আশ্বাস পূরণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা তৃতীয় দিনেও উক্ত কর্মসূচি পালন করেন।

ইমরান

×