ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরে দাঁড়িয়ে থাকা ৩০০ বছরের চাকমা রাজবাড়ী আজ নিঃসঙ্গ

মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম 

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২১ জুন ২০২৫

রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরে দাঁড়িয়ে থাকা ৩০০ বছরের চাকমা রাজবাড়ী আজ নিঃসঙ্গ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে দাঁড়িয়ে আছে একটি নিঃশব্দ ইতিহাস। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই রাজবাড়িটি ছিল পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী শাসনব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। চাকমা রাজবংশের রাজাধিরাজেরা এখানেই গড়েছিলেন তাঁদের প্রশাসনিক ঘাঁটি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।

তবে বর্তমানে প্রাচীন স্থাপনাটি কালের ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়ার পথে। কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে, কোথাও চূড়া বসে গেছে মাটিতে। ঝোপঝাড়ে ঘেরা এই স্থানটি এখন যেন এক ভূতের বাড়ি, যা স্থানীয়দের চোখে শুধুই অতীতের এক স্মৃতিচিহ্ন। ইতিহাসবিদদের মতে, এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন চাকমা রাজবংশের একজন প্রভাবশালী রাজা, যিনি পাহাড়ি জনপদে তাঁর শাসনব্যবস্থা চালাতেন নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থার উপর ভর করে। রাজবাড়ির চারপাশজুড়ে ছিল রক্ষীবাহিনীর ব্যারাক, সভাকক্ষ, পূজামণ্ডপ, বসতঘর ও অতিথিশালা। স্থাপনাটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ইট, চুন-সুরকি এবং প্রাচীন ধাঁচের নির্মাণশৈলী, যা এখনো আংশিকভাবে দৃশ্যমান।

এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি কোনোভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত নয়, ফলে নেই কোনো সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন মাঝে মধ্যে জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলেও দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের অভাবে এটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সংরক্ষণ করতে পারলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। রাজবাড়ির পাশে গড়ে উঠতে পারে একটি নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর, যেখানে চাকমা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, পোশাক, বসবাস, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি তুলে ধরা যাবে। এতে শিক্ষার্থী, গবেষক ও পর্যটকদের জন্য এটি হতে পারে আকর্ষণীয় গন্তব্য।

চাকমা রাজবাড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি জনপদের অতীত গৌরবের বহিঃপ্রকাশ। কালের খসে পড়া ইটগুলোয় লুকিয়ে আছে ইতিহাসের গন্ধ, যা সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। রাঙ্গুনিয়ার মানুষ চায়, এই নিঃশব্দ রাজবাড়ি আবার যেন ফিরে পায় তার হারানো প্রাণ।

নোভা

×