সম্প্রতি বাঁশখালী সরকারি আলাওল কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি নাচের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুক ও টিকটকে, ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিও শুধু বিনোদনের উপাদান হয়ে ওঠেনি, বরং তা আমাদের সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মূল্যবোধকে ঘিরে এক গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
একটি বিদায় অনুষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মাঝে আবেগ, কৃতজ্ঞতা ও মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটার কথা, সেখানে যদি তা পরিণত হয় কেবলমাত্র এক ‘টিকটক শো’তে, তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এটাই কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি?
বিষয়টি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ, এই ধরনের কর্মকাণ্ড যে প্রতিষ্ঠানে ঘটে, সেখানে শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কোথাও না কোথাও তদারকির ঘাটতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং শৃঙ্খলার অভাব আছে বলেই এমন ঘটনা ঘটে।
আমরা মানতে পারি, বর্তমান সময়ের তরুণ সমাজ অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর, তাদের মধ্যে প্রকাশের একধরনের স্বাধীনতা কাজ করে।তবে সেই স্বাধীনতা যদি শালীনতার সীমা অতিক্রম করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তাহলে তা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত আচরণ নয়, সমষ্টিগত সাংস্কৃতিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে, এ ঘটনাকে পুরোপুরি নেতিবাচকভাবে না দেখে সমাজের একটি চেতনার জায়গা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কারণ, এটি আমাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নৈতিক অবস্থা, সংস্কৃতি এবং নেতৃত্বের মান নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।
সুতরাং, এখন সময় শুধু সমালোচনা নয়, দায়িত্বশীল চিন্তা ও সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হতে হবে আদর্শের পাঠশালা, শুধু সনদ বিলির জায়গা নয়। সামাজিক মূল্যবোধ, শালীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ এই শিক্ষাগুলোও ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত।
আমরা যদি আজই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুণগত পরিবর্তনের পথে না হাঁটি, তাহলে আগামী প্রজন্মের মানসিক ও নৈতিক গঠনে বড় ধস নামবে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সবার জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
মিমিয়া
