
সরকারি নীতিমালা অমান্য করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কাপড়, মুদি সিলভারসহ ওষুধ ফার্মেসিতে পথচারীদের যাতায়াতের পথরোধ করে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। এছাড়াও যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। মোড়ে মোড়ে রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অনুমোদন ছাড়াই বহু দোকানে এই ব্যবসা চলছে। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে সিলিন্ডার। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও এ বিষয়ে প্রশাসনের নেই কোনো পদক্ষেপ ও নেই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো তদারকিও।
শুক্রবার (১৬ মে) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, মুদির দোকান, তেলের দোকান, ঝুপড়ি, চায়ের দোকান,ইলেকট্রনিকের দোকান এমনকি ওষুধের দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশসহ জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার গুদামজাত করা হয়েছে।
উপজেলার ৯৫ শতাংশ দোকানে লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আইন ভঙ্গ করে ২০০ থেকে ৩০০ সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই পণ্য সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। বড় কোম্পানিগুলো লাইসেন্স নিয়েই এলপিজি সিলিন্ডার বাজারে ছাড়ছে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের লাইসেন্স আছে কি না বিষয়টি দেখছে না কোম্পানিগুলো। তাছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাঞ্ছারামপুরে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এ উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের রান্নার কাজে ভরসা এখন গ্যাস সিলিন্ডার। বাজারে ব্যাপক চাহিদা আর লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে বাঞ্ছারামপুরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সিলিন্ডার এলপি গ্যাসের ব্যবসা। বর্তমানে চায়ের দোকান, ওষুধের দোকান, কসমেটিক ও ভ্যারাইটিজ স্টোর, কাপড়ের দোকান, লাইব্রেরি, মুদিখানা এমনকি চালের দোকানেও এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে অবাধে। ফলে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণ ও মারাত্মক দুর্ঘটনার।
এ বিষয়ে স্থানীয় একজন আইনজীবী বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড, অনাধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ও বিক্রি করতে বিস্ফোরক লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক।
কড়ইকান্দি ফেরিঘাট সড়কের পাশেই একটি কসমেটিক দোকানে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন বাবুল হোসেন। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় জমজমাট ভাবেই এ ব্যবসা করেন তিনি। এ ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈধভাবেই ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই এ ব্যবসা করছেন তিনি। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না এবং ডিলারও তাকে অবহিত করেননি। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে।
সনদ ছাড়া ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি। বর্তমানে এলপিজি গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে সারাদেশে ৬ হাজার সনদ আছে।
বাঞ্ছারামপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর সেন্টু চন্দ্র সেন বলেন, লাইসেন্স ছাড়া যারা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছে তাদের আমরা দ্রুত লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছি।
এছাড়া ডিলারদেরও খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্স দেখে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা জানান, বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া এলপি গ্যাস সিলিন্ডার যারা বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজু