ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাইবান্ধায় ছড়িয়ে পড়েছে গবাদিপশুর ’লাম্পি স্কিন’

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১৬ মে ২০২৫

গাইবান্ধায় ছড়িয়ে পড়েছে গবাদিপশুর ’লাম্পি স্কিন’

গাইবান্ধায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস। জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসা করেও কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর শরীরে শুরুতে জ্বর, ব্যথা ও গলা ফুলে যায়। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গোলাকার গুটি বা ফোস্কা ওঠে। পা ও শরীরের নিচের অংশ ফুলে পানি জমে এবং একপর্যায়ে ফোস্কা ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হয়। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। অনেক গরু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের রেজাউল বলেন, ‘আমার গরুর হঠাৎ জ্বর আসে। তারপর গলায় ফোস্কা উঠে। ওষুধ দিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।’ একই ইউনিয়নের আমিরুল ইসলাম বলেন, ওষুধ খাওয়ালেও একটি গরু থেকে আরেকটিতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগটি।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে ৫০টি গরু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে স্থানীয় খামারিদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।গরুর শরীরে গুটি ওঠা, জ্বর, ওজন কমে যাওয়া এবং দুধের পরিমাণ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে ভাইরাসটিতে। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। ইতিমধ্যে কয়েকটি গরুর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নের খামারি আবু তালেব জানান, একটা বিদেশি জাতের বাছুর মারা গেছে। পশু হাসপাতালে নিয়েও কোনো লাভ হয়নি। দামি ছিল বাছুরটা।

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, ‘খামারিদের বলা হয়েছে আক্রান্ত গরু আলাদা রাখতে, বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে এবং নিয়মিত টিকা দিতে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করতে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ রেখে সচেতন হতে হবে। গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। আক্রান্ত গরুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে, মুখে না পারলে শরীরে পুশ করতে হবে। আমাদের একাধিক ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। কোনোভাবেই স্থানীয় বা ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাম্পি ভাইরাসে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি বড়। দুধ উৎপাদন ও বাজারমূল্য হ্রাস পাওয়ায় খামারিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আগাম প্রতিরোধ, টিকাদান এবং সচেতনতাই হতে পারে এই রোগ মোকাবেলার কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন তারা।

রাজু

×