ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

কক্সবাজারে কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ইইউ-অর্থায়নে এফএও’র ‘প্রো-অ্যাক্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৬, ১৪ মে ২০২৫

কক্সবাজারে কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ইইউ-অর্থায়নে এফএও’র ‘প্রো-অ্যাক্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-অর্থায়িত প্রো-অ্যাক্ট বাংলাদেশ। কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প। 

কক্সবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের উদ্বোধনী কর্মশালায় এ প্রকল্পের সূচনা হয়। চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বন বিভাগ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের (ডিওএফ) সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি কক্সবাজার সদর, রামু, টেকনাফ ও উখিয়া এই চারটি উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ইইউ অর্থায়িত এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কৃষি খাতের টেকসই ও পুষ্টিকর ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং কৃষক পরিবারের আয় বৃদ্ধি করা। প্রকল্পের আওতায় উন্নত উদ্যান ফসল উৎপাদন, মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ, মৎস্য খাত উন্নয়ন এবং বিষমুক্ত শুটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা প্রদান করা হবে। এ উদ্যোগকে টেকসই করতে মূল্য শৃঙ্খলা উন্নয়ন, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক ভিত্তিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আওতায় জলাধার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, বহু-ঝুঁকি মানচিত্রায়ন, পাহাড়ি এলাকায় বৃক্ষরোপণ এবং ভূমিধস পূর্বাভাস ব্যবস্থার হালনাগাদকরণ করা হবে।
প্রকল্পটি ৫৪,০০০ জনেরও বেশি উপকারভোগী যাদের মধ্যে রয়েছে ছোট কৃষক, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তি, টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার নীতিতে ভিত্তিশীল।

প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং-এর পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মি. মিখাল ক্রেজা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইং-এর একজন প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মিস মার্ঘেরিতা কাপালবি। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। 
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব কোঅপারেশন মি. মিচাল ক্রেজা বলেন, প্রো-অ্যাক্ট প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল সোসাইটি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য সবার মালিকানা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এফএও বাংলাদেশ-এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. সানু দিয়া প্রকল্পটির সামাজিক ও মানবিক দিক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, প্রো-অ্যাক্টের মতো প্রকল্পগুলো, যা উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, তা শুধুমাত্র শরণার্থী সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়দাতা পরিবারের জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা করবে না, বরং শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আশ্রয়দাতা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তি প্রবর্তন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিএই এই প্রকল্পের উদ্ভাবনগুলো স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএই পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং-এর পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার বলেন, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও জনসংখ্যার চাপ গ্রামীণ জীবিকা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। এমন সময়ে এফএও এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আমাদের টেকসই কৃষি চর্চাকে উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে, যা স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

এই উদ্বোধনী কর্মশালার মাধ্যমে কক্সবাজারের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য একটি সমন্বিত প্রয়াসের সূচনা হলো, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ও সহনশীল ভিত্তি গড়ে তুলবে। 

 

রাজু

×