ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

মালয়েশিয়াগামী মানবপাচার চক্রের ফাঁদে নিঃস্ব মহেশখালীর বহু পরিবার

ফারুক ইকবাল, নিজস্ব সংবাদদাতা মহেশখালী

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ১০ মে ২০২৫

মালয়েশিয়াগামী মানবপাচার চক্রের ফাঁদে নিঃস্ব মহেশখালীর বহু পরিবার

মহেশখালীর পাহাড়-সমুদ্রঘেরা শান্ত জনপদে নেমে এসেছে অসহনীয় কান্না ও হতাশার ছায়া। জীবনের উন্নত প্রত্যাশায় বহু মানুষ দালালচক্রের প্রলোভনে পা দিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে মালয়েশিয়ার পথে।তবে সেই যাত্রা হয়ে উঠছে অনেকের জন্য দুঃস্বপ্ন। 

সম্প্রতি অন্তত ৫০টি ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকা-মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, হোয়ানক ও বড় মহেশখালী, শাপলাপুর, কুতুবজোম পৌরসভা থেকে অসংখ্য তরুণ ও যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে মানবপাচারের শিকার হয়েছে। টুরিস্ট ভিসার আড়ালে তারা থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করে। 

যদিও সিঙ্গাপুর সীমান্তে কড়াকড়ি বেশি থাকায় অধিকাংশ দালাল থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত সীমান্ত দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানুষ পাচারের পথ বেছে নিচ্ছে। ভিকটিমদের পরিবারের ভাষ্যমতে, প্রতিটি মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নামে আদায় করা হয়েছে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা। মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পরও পুরো অর্থ না পেলে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অনেককে দিনের পর দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়, মোবাইলে ভিডিও পাঠিয়ে বাড়ি থেকে টাকা আদায়ের চাপ দেয় দালালচক্র।

এক ভুক্তভোগীর ভাই জানান, “আমার ভাইকে তিন মাস আটকে রেখেছিল। তারা দিনে একবার খাবার দিত, আর প্রতিদিন ভিডিও পাঠিয়ে টাকা চাচ্ছিল। সব বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পাঠানোর পর ছেড়েছে।”

মানবপাচারের শিকার হয়ে বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে, যাদের মরদেহ দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। নিখোঁজদের পরিবার দিশেহারা, কেউ কেউ স্থানীয় প্রশাসন বা মিডিয়ার সহায়তা চাইলেও কোনো কার্যকর ফল মেলেনি।

এ বিষয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আনম হাসান বলেন,"দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীতে সক্রিয় একাধিক দালালচক্র এই পাচারের কাজে জড়িত। এদের অনেকে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়ে এই চক্র গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন আরো বেশি তৎপর ভূমিকা পালন করলে মানবপাচার রোধ হবে।"

আফরোজা

×