
ছবি: জনকণ্ঠ
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন ও পাশের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ দিয়েছে দুই এলাকার মানুষ। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম বন্যা। ডুবে গেছে শত শত একর জমির কাঁচা-পাকা ধান সহ অনান্য ফসল। হুমকির মুখে পড়েছে দশানী নদীর অস্তিত্ব ও নদী-কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য।
আইন অনুযায়ী, প্রবাহমান নদীতে বাঁধ দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তা সত্ত্বেও স্থানীয়রা নিজেদের স্বার্থে নদীর ওপর নির্মাণ করছে এসব বাঁধ।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাদারেরচর খাপড়াপাড়া, চর আইরমারী, মুন্দিপাড়া, মুন্সিপাড়া, বাঘাডুবাসহ অন্তত ১১টি গ্রামের মানুষ গত সপ্তাহে দশানীর একটি শাখা নদীতে বাঁধ দেয়। নদীভাঙনে ঘরবাড়ি ও জমি হারানো এই মানুষদের দাবি—তারা বাধ্য হয়ে নিজেদের রক্ষায় বাঁধ দিয়েছেন।
এরই প্রতিক্রিয়ায় বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কিছু বাসিন্দা মূল নদীতেই বাঁধ দেয়। এই পাল্টাপাল্টি বাঁধের ফলে উজানের গাজিরপাড়া, চরগাজিরপাড়া, বাঙ্গালপাড়া, কুতুবেরচর, দপরপাড়া, কলাকান্দাসহ বেশ কিছু গ্রামের শত শত একর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ধানের শীষে দানা আসার সময়েই মাঠে পানি উঠে গেছে। এখনই পানি না নামলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
বকশীগঞ্জের মেরুরচর এলাকার কৃষক রাজু হাসান বলেন, জমিতে ধান পেকেছিল। এখন পানিতে তলিয়ে গেছে সব। এইভাবে থাকলে খাবারই জোটবে না।
এদিকে যাঁরা বাঁধ দিয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য—দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙনে ভুগছেন তাঁরা। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা হারিয়ে তারা বাধ্য হয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দশানী নদীতে তৈরি এই সংকটে দুই পাশের মানুষ এখন মুখোমুখি। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানান, বাঁধের কারণে কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাঁধ সরাতে চাই, কিন্তু যারা বাঁধ দিয়েছে তারা তা মানছে না।
মেরুরচর এলাকার কৃষক মিজান হোসেন বলেন, ধান পাকার মুখে পানি ঢুকে সব তলিয়ে গেছে। এখন যদি পানি না নামে, আমরা খাওন কই পাইমু?
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, “বিষয়টি দুই উপজেলার মধ্যে হওয়ায় জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। উর্ধ্বতন নির্দেশনা এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নদীর এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে, আবার শুকনো মৌসুমে দেখা দেবে পানির হাহাকার। নদীর প্রাণ হারাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য, আর ভেঙে পড়বে কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রা।
শিহাব