
কিয়ামতের দিন সম্পর্কে মুসলমানদের বিশ্বাস অত্যন্ত গভীর। সেই দিনটি হবে বিচারের দিন, যেদিন সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে। হাদিসে এসেছে, সেই দিনে মানুষের অবস্থা হবে ভীতিকর। মা তার সন্তানকে চিনবে না, সন্তান চিনবে না তার পিতা-মাতাকে। মানুষ শুধু নিজের নাজাতের জন্য ছুটোছুটি করবে। অথচ সেই দিনই নির্ধারণ করবে কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামি।
এই কঠিন দিনে মহান আল্লাহ তাআলা কিছু ব্যক্তির দিকে ফিরেও তাকাবেন না। তাঁদের জন্য থাকবে ভয়াবহ শাস্তি। কী এমন কাজ তারা করেন, যার কারণে এমন কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করে? সেই বর্ণনা পাওয়া যায় নবীজির হাদিসে।
কিয়ামত সত্য। কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সবাই একত্রিত হবে। হাশরের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন মানুষ ছোটাছুটি করবে। মা তার সন্তানকে চিনবে না। সন্তান তার বাবা-মাকে চিনবে না। তবে জানেন কি? কেয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির দিকে ফিরেও তাকাবেন না।
পরকালে সফল হতে আল্লাহর হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও তার দেখানো পথ অনুসরণও জরুরি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, “হে নবী, আপনি তাদের বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।”
আনাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ করতে চান, তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান, তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তারপর কেয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন।”
তিন শ্রেণির মানুষ যাদের দিকে আল্লাহ তাকাবেন না
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর মানুষের প্রতি আল্লাহ তাআলা দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
১. মুসাফিরকে পানি না দেওয়া ব্যক্তি
যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে অথচ সে মুসাফিরকে তা দিতে অস্বীকার করে—এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন ক্ষমা করবেন না।
২. দুনিয়ার স্বার্থে ইমামের বায়াত গ্রহণকারী
সেই ব্যক্তি যে ইমামের হাতে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে বায়াত গ্রহণ করে। যদি ইমাম তাকে কিছু দুনিয়াবী সুযোগ দেন তাহলে সে খুশি হয়। আর যদি না দেন তবে সে অসন্তুষ্ট হয়।
৩. মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রেতা
তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আসরের নামাজ আদায়ের পর তার জিনিসপত্র বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে আর বলেন, “আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, আমার এই দ্রব্যের মূল্য এত এত দিতে আগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু আমি তা বিক্রি করিনি।” এতে এক ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে তা ক্রয় করে নেয়।
পবিত্র কোরআনের সতর্কবার্তা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কোরআনে বর্ণিত একটি আয়াত তেলাওয়াত করেন। সেখানে বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে করা অঙ্গীকার ও নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে, তারা আখিরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না।”
দুনিয়াতে আমাদের প্রতিটি কাজেরই পরিণতি রয়েছে। ছোট মনে হওয়া অনেক কাজও কেয়ামতের দিনে বড় শাস্তির কারণ হতে পারে। তাই আমাদের উচিত সততা, ইমানদারি এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। মনে রাখতে হবে,কেয়ামতের দিনে মহান আল্লাহ যেন আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন।
সূত্র:https://tinyurl.com/2fajjnb2
আফরোজা