
ছবি সংগৃহীত
সোহাগ ইসলাম। বয়স ২৫ বছর। নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের ভরতপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবা শাহজালাল। পেশায় কৃষক। মা মোমেনা গ্রামের দেওয়ানী বলে সকলেই চেনেন। ছেলের দুই বিয়ে দিয়েছেন এই বাবা মা।
তাদের ছেলে সোহাগ আগে ট্রলি চালাতো। তারপর ট্রাক্টর। জুয়া খেলতো ও মাদক সেবন করতো সে। জুয়ায় হেরে ট্রাক্টর- ট্রলি সব খুয়েছে। তারপর এনজিও থেকে ঋণ করে কিনেছে একটি চার্জার ভ্যান। যা চালিয়ে তার দিন চললেও সোহাগের খপ্পরে পড়েছে অনেক নারী। এ নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকে জড়িমানা দিতে হয় তাকে।
এরপরেও তার স্বভাব পরিবর্তন ঘটেনি। এবার ৬ বছরের শিশুকে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। এলাকাবাসী ঘিরে রেখে খবর দেয় পুলিশকে। পুলিশ গিয়ে তাকে ধরে আনে থানায়। মামলার পর বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে শ্রীঘরে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায় সোহাগ ইসলাম ৭ বছর আগে বিয়ে করে। সেই ঘরে রয়েছে একটি ছেলে সন্তান। প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ির যৌতিক নিয়েও খান্ত হয়নি সে। যখন তখন এসে শ্বশুড়ি বাড়ির গরু ধরে নিয়ে গিয়ে হাটবাজারে বিক্রি করে দিতো। মেয়ের সুখের জন্য শ্বশুড় মুখ বুঝে সব সহ্য করতো। এই সুযোগে সম্প্রতি সোহাগ ইসলাম পাশ্ববর্তী কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পোড়াকোট খোকার বাজার গ্রামের এক মেয়ের সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলে মা মোমেনা ও বাবার সহায়তায় বিয়ে করে।
এরপর দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলতে প্রথম স্ত্রীর ওপর শুরু হয় নির্যাতনের খড়ক। শ্বশুড় শাশুড়ি ও স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রথম স্ত্রী গলায় দড়ি দিতে গেলে গ্রামবাসী তাকে রক্ষা করে। এরপর বিচার শালিসে প্রথম স্ত্রীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ করে সোহাগ। এবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলতে যৌতুক দাবি করে।
এনিয়ে সোহাগ ইসলাম ও তার মা পোড়াকোট গ্রামে গিয়ে ওই মেয়ের পরিবারকে যৌতুকের মাধ্যমে ঘরে তুলবে ,না হয় তুলবে না বলে হুমকি দিয়ে আসে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা সৃস্টি হয়। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে না তুলতেই সোহাগ ইসলাম এবার ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়।
নীলফামারী থানায় বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে দায়ের করা মামলায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে উল্লেখ করেন তার ৬ বছরের মেয়েটি কচুকাটা জাহেদুখাতুন আইডিয়াল মাদ্রাসায় নার্সারীরে পড়ে। ঘটনার দিন বুধবার (২২ এপ্রিল) বেলা বারোটায় স্কুল ছুটে হলে মেয়ে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিল।
একই গ্রামে বাড়ি হওয়ায় শিশুটি ভ্যানচালক সোহাগ ইসলাম কে চেনে। এ সময় সোহাগ ওই ৬ বছরের শিশুকে বাড়িতে পৌছে দেয়ার নাম করে ভ্যানে তুলে। পথে একটি ফাঁকা স্থানে ভ্যান থামিয়ে ভুট্টা ক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা চালায়।
ওই সময় শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয় সোহাগ। এলাকাবাসী জানান, ওই ঘটনায় শিশুটি চিৎকার করে দৌড়ে ভুট্টা ক্ষেতের বাহিরে চলে এসে কান্নাকাটি করছিল। ফলে এলাকাবাসী ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে দ্রুত নীলফামারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এলাকাবাসী ভুট্টা ক্ষেতটি ঘিরে রাখে। পুলিশ ও এলাকাবাসী ভুট্টা ক্ষেত থেকে সোহাগ ইসলামকে আটক করে।
শিশুটি সোহাগ ইসলামের কামড়ে আহত হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ দেওয়ানী মায়ের কারনে তার ছেলের চরম অধপতন ঘটেছে। ছেলের মায়ের আচরনে গ্রামের মানুষজনও অতিষ্ঠ।
কচুকাটা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী জানান, সোহাগ ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রামে অভিযোগের শেষ নেই। সে যেমন জুয়ারী তেমনি মাদকাসক্ত। কিছুদিন আগে চুরি ঘটনায় সে আটক হয়েছিল। জড়িমানা দিয়ে ছাড়া পায়। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে। সেখানেও যৌতুকের দাবি নিয়ে সমস্যা। এখন আবার এক শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টা করে শিশুটির শরীরে কামড় দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে। গ্রামের মানুষজন সহ পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পুলিশের সহায়তায় সোহাগকে আটক করে।
নীলফামারী সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগে সোহাগ ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজাতে প্রেরণ করা হয়। আসামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনার বিস্তোর অভিযোগ রয়েছে।
আশিক