
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করতে মিরপুরে চালু হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের পাইলট প্রকল্প। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং জাইকার যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’ এর আওতায়।
এই প্রকল্পটি মিরপুরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই সিগন্যাল ব্যবস্থার কার্যক্রম চলবে, ছুটির দিন ব্যতীত। পথচারীরা এখন একটি পুশ সুইচ চেপে সিগন্যাল পরিবর্তনের মাধ্যমে রাস্তা পার হতে পারবেন। সবুজ বাতি জ্বলে উঠলেই গাড়িগুলো ৩০ সেকেন্ড থেমে থাকবে, যাতে পথচারীরা নিরাপদে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে পারেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতনভাবে সিগন্যাল অনুসরণ করছেন। বাবার কোলে থাকা ছোট্ট সাইম থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষা করছে সিগন্যাল অনুযায়ী রাস্তা পার হওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে শহরে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে।
ডিএনসিসি সংশ্লিষ্ট রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও চিহ্নিত করে উপযোগী করে তুলেছে, এবং সেখানে একটি পোর্টেবল ট্রাফিক লাইটও স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহন চালকদের জন্য নির্দেশনা অনুযায়ী, হলুদ বা লাল ট্রাফিক লাইট জ্বললে স্টপ লাইনের আগে থামতে হবে এবং কোনোভাবেই জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর যানবাহন থামানো যাবে না। পথচারীদের অবশ্যই ফুটপাতে অপেক্ষা করে সবুজ বাতি দেখে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে হবে।
এই এলাকাগুলো বাছাই করা হয়েছে কারণ সেখানে আশেপাশে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন অনেক পথচারী অনিরাপদভাবে রাস্তা পার হন। সেই সঙ্গে অবৈধ পার্কিং, জেব্রা ক্রসিংয়ে বাস থামানোসহ নানা নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে।
প্রকল্পটির সমন্বয়ক সঞ্জয় রয় জানান, ৮ মে পর্যন্ত চলবে এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। সফল হলে ফার্মগেট, বাংলামোটরসহ আরও ২২টি পয়েন্টে এই প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে পথচারীদের সচেতন করতে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার সারওয়ার জানান, “এই উদ্যোগ পরীক্ষামূলক হলেও ভবিষ্যতে রাজধানীজুড়ে এই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।”
পথচারী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে ১,০০৯ জন পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এই প্রকল্প দুর্ঘটনা কমাতে ও নগরের সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আঁখি