
ঘুমধুম-তুমব্রু ও উখিয়া-টেকনাফের ১৫টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাখাইনে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিজ নিজ দোকানে নেয়া হচ্ছে বলে পার পেয়ে গেলেও ওইসব দোকানিদের গুদাম থেকে রাতের বেলায় শেষ হয়ে যায় গাড়িভর্তি পণ্য। বিজিবি টহল দল নিয়মিত পাহারায় থাকলেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পণ্য পাচার কাজ। ধরাও পড়ছে না ওই চোরাচালানি সিন্ডিকেট।
জানা যায়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আকিয়াব থেকে মংডু এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আসা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির মিলিটারি। এ কারণে মংডু টাউনশিপসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে কিছু কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার সুযোগে কয়েকজন চোরাচালানি সীমান্তে সিন্ডিকেট গঠন করে ওপারে (মিয়ানমার) পণ্য পাচার করে চলেছে। এসব পণ্য স্থানীয়দের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটির কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যার কারণে উপজেলা টাস্ক ফোর্স কমিটিরও কোনো তৎপরতা নেই।
স্থানীয়রা বলেন, মিয়ানমারে পণ্য পাচার সহজকল্পে দলীয় পরিচয়ে কিছু যুবক বিজিবিকে চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে পণ্য পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারিদের নামে সীমান্ত এলাকায় দোকান বা গুদাম নেই, তারা কৌশল বের করেছে যেভাবে হোক, পণ্য আনবেই। ঠিকই তাদের পরিকল্পনায় গলদ হচ্ছে না মোটেও। লাখ লাখ টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারে। তারা সীমান্ত এলাকার এক শ্রেণির দোকানিকে বশে এনে তাদের মাধ্যমে দিনেরবেলায় এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনছে কুতুপালং ও উখিয়া থেকে। ওই দোকানিরা নিজেদের দোকানে বিক্রয়ের জন্য এসব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে দাবি করলেও ঠিকই রাতের গভীরে সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলেন, গ্রামভিত্তিক কত কেজি পণ্য প্রত্যেহ লাগতে পারে, তার একটি হিসাব করে প্রত্যেক দোকানিকে গ্রেড অনুসারে বণ্টনের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিলে অতিরিক্ত পণ্য সীমান্ত এলাকায় আনতে পারবে না। প্রতিদিন বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে গিয়ে মালামালের চাহিদা পত্র, সিল স্বাক্ষরসহ নিয়ে বড় মহাজনের কাছে যেতে পারে। তালিকার বেশি মাল পওয়া গেলে তা জব্দ করে নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে শুল্ক গুদামে জমা করা যেতে পারে। স্থলপথে সীমান্ত এলাকায় এই সিস্টেম আগেও চালু ছিল বলে জানিয়েছেন সীমান্ত এলকার বাসিন্দারা। এই সিস্টেম বর্তমানে চালু না থাকায় স্থলপথে ইচ্ছেমতো পণ্য নিয়ে এসে ওপারে পাচার করছে কয়েকটি সিন্ডকেট। কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্ট ব্যবহার করে অবৈধ পণ্য পাচার করছে তারা। রামুর গর্জনিয়া, উখিয়ার পাত্রাজিরি, বড়বিল, ডিগলিয়াপলং, ধামনখালী, বালুখালী, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, জলপাইতলী, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, টেকনাফের হ্নীলা, জাদিমুড়া, নাইট্যংপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত পথে বিজিবি সদস্যদের আরও কড়াকড়ি আরোপ করা দরকার বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সীমান্ত অধিবাসিরা। মিয়ানমারে যেসব পণ্য পাচার হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, তেল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ-রসুন, হলুদ মরিচ, সার, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, ত্রিপল, ডিজেল, পেট্রোল ইত্যাদি। বিজিবি টহল দলের চোখে পড়লে এসব পণ্য জব্দও করা হয়ে থাকে। তবে সীমান্তে এসব পণ্য কারা পাচার করছে-তারা কারা, তাদের ঠিকানা কোথায় এসব বিষয়ে প্রশাসনের কমবেশি জানা রয়েছে। টেকনাফ, উখিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ও ঘুমধুম ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩০ জন গড ফাদার ও ৮০ জন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি রয়েছে। ওই চিহ্নিত চোরাচালানি ও সহযোগিতাকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।