ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

সাগরে ট্রলার ডুবিতে স্বামী নিখোঁজ

সন্তানের চিকিৎসা খরচ যোগাতে শ্যাওলার মতো ভাসছেন খাদিজা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:১৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সন্তানের চিকিৎসা খরচ যোগাতে শ্যাওলার মতো ভাসছেন খাদিজা

ছবি: প্রতিনিধি

সাত মাস বয়সী শিশু সন্তান ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে চিকিৎসার সহায়তার জন্য মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আকুতি জানাচ্ছিলেন জেলেবধূ খাদিজা বেগম (১৯)। একমাত্র সন্তানের প্রস্রাবের রাস্তায় টিউমার ধরা পড়েছে। এই মাসের মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে। চিকিৎসক ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচের কথা বলেছেন। চেয়ে-চিন্তে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে, কিন্তু এখনো ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর কলাপাড়া পৌরসভার কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে, রোদের মধ্যে শিশুকে কোলে নিয়ে সহায়তার আবেদন জানাচ্ছিলেন খাদিজা। তার দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই। আট মাস আগে ট্রলারডুবিতে স্বামী নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যেই বসতি হারিয়ে, দিশেহারা জীবন কাটাচ্ছেন।

পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল খাদিজার। প্রথম সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। স্বামী রহিম সরদারকে নিয়ে আগত সন্তানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সব যেন নিয়তির হাতে বিলীন হয়ে গেল।

গর্ভের সন্তানের বয়স যখন নয় মাস, তখন সাগরের এক ঘূর্ণিঝড় খাদিজার জীবন ওলট-পালট করে দেয়। স্বামী রহিম সরদার মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হন। ১৭ জন জেলের সঙ্গে তিনিও সাগরে তলিয়ে যান। কয়েকদিন পর চারজনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও, বাকি ১৩ জনের এখনো কোনো সন্ধান নেই। আট মাস কেটে গেছে, কিন্তু কোনো খোঁজ মেলেনি।

স্বামী নিখোঁজের ১৭ দিন পরই খাদিজাকে ছাড়তে হয় শ্বশুরবাড়ি। তাদেরও সঙ্গতি ছিল না তাকে ভরণ-পোষণ দেওয়ার। এরপর ১৫ দিন পর পৃথিবীর আলো দেখল তার নাড়িছেঁড়া ধন ইয়াসিন। কিন্তু খুশির বদলে আর্তনাদে ভেঙে পড়লেন খাদিজা। সন্তানের ভরণ-পোষণ কীভাবে চালাবেন, তা ভেবে বিনিদ্র রাত কাটতে থাকে তার।

এর মধ্যেই বজ্রাঘাতের মতো নেমে এলো আরেক দুঃসংবাদ—সন্তান গুরুতর অসুস্থ। তার প্রস্রাবের রাস্তায় টিউমার ধরা পড়েছে। এখন চিকিৎসা করানো অনিবার্য, কিন্তু অর্থের অভাবে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। বাধ্য হয়ে হাত বাড়িয়েছেন মানুষের সহায়তার জন্য।

স্বামী হারানোর কষ্টের সঙ্গে দারিদ্র্যের চরম কষাঘাতে বিপর্যস্ত খাদিজা এখন আশ্রয় নিয়েছেন নিজের মা কোহিনুর বেগমের ছোট্ট ঘরে। কোহিনুর অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। টানাটানির সংসারে শিশু সন্তানের চিকিৎসার খরচ যোগানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

কান্নাভেজা কণ্ঠে খাদিজা বললেন, "এই বয়সেই চিরদিনের জন্য স্বামীকে হারালাম। এখন একমাত্র সন্তানও অনিশ্চয়তার মুখে। যদি ২০ হাজার টাকা সহায়তা পেতাম, তাহলে ইয়াসিনের চিকিৎসা করিয়ে তাকে বাঁচাতে পারতাম।" কথাগুলো বলে থমকে গেলেন খাদিজা। গলা ভারি হয়ে এলো, দুচোখ ঝাপসা হয়ে গেল।

মেজবাহউদ্দিন মাননু/এম.কে.

×