
ছবি: প্রতিনিধি
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের আব্দুলাপুরের করেরগাঁও এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় চলছে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিসা গলানোর কারাখানা। এসব কারখানায় নষ্ট ও বাতিল ব্যাটারি এবং পুরোনো লোহার বর্জ্য এনে গলানো হচ্ছে। বর্জ্য গলানোর সময় এর ক্ষতিকারক ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে স্থানীয় মানুষের। দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসল ও জমি। পাশাপাশি এখানে কর্মরত কর্মচারীরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। সিসা কারখানার চারপাশে জন্মানো ঘাস খেয়ে হুমকির মুখে পড়ছে পশুপাখিরা। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে মাসের পর মাস চলে আসছে এ কারখানা। কারখানাটির কাগজপত্র দূরে থাক নেই ন্যূনতম সাইনবোর্ড।
আজ ( ২৪ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির উপরের অংশ খুলে প্লেট বের করছেন; কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করছেন। এসব শ্রমিক পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও সিসার কাজ করে রাত-দিন পাশের পুকুরে হাত-মুখ ধুয়ে থাকেন। ফলে পানির রং কালচে আকার ধারণ করেছে। এছাড়া ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় টিনের বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ড বিহীন গড়ে উঠা ওই কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পুরনো ব্যাটারি থেকে সিসা পোড়ানো হচ্ছে। এতে কারখানার আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ক্ষেতের ফসল ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি গাছপালা ও সবজির ক্ষতি হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক নানান জটিলতা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে সিসা কারখানাটি বন্ধসহ সিসা তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানার শ্রমিক বলেন, গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। অন্য কাজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যাটারি কারখানায় কাজ করছি। অন্য কোথাও কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই কাজ করবো।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কারখানার শ্রমিক বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরোনো ব্যাটারি কিনে এখানে এনে ভেঙে প্লাস্টিক আলাদা করে সিসা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৪টা পর্যন্ত ব্যাটারির প্লেট পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়।
পরিবেশবিদরা বলছেন, খোলামেলাভাবে এসব অ্যাসিড গ্যাস বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হুমকির মুখে পড়তে পারে জীববৈচিত্র্য। আর কৃষিবিদরা আশঙ্কা করছেন ফসলি জমির দীর্ঘমেয়াদি উর্বরতা হারানোর। সব মিলিয়ে প্রকৃতি-পরিবেশ ও স্থানীয় মানবস্বাস্থ্যের জন্য সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে হালতি বিলের বানিয়াপুকুর এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে সিসা গলানোর কারখানাটি।
চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসহ ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, এ কারখানাগুলোর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ করে এমন কোনো কারখানা কেরানীগঞ্জে চলতে দেওয়া হবে না। শিশা কারখানা সহ পরিবেশ দূষণ করে এমন সকল কারখানার বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
এম.কে.