বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের মুখোমুখি। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে ওয়াদা পালন করে না বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো আইনও পরিবর্তন করে ফেলে। দেড় যুগ ধরে ভোট তামাশায় রূপান্তরিত হয়েছে। নির্বাচনে অসাধু ব্যবসায়ী, ঋণ খেলাপীরা নমিনেশন কিনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিল প্রতীকের কারণে।
শনিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ সংস্কার কমিশনের কাছে সুপারিশমালা প্রণয়নের সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের ৭টি বিভাগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সুজন-চট্টগ্রামের বিভাগীয় আহ্বায়ক প্রফেসর সিকান্দার খান এবং সদস্য সচিব এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর সিকান্দার খান বলেন, অতীতে এতবার বলা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সংস্কার হয়নি। এগুলো বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো কী ছিল চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব ওয়াদা করে নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সেসব ওয়াদা পালন করেনি। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো পাল্টা আইনও পরিবর্তন করে ফেলেছিল। এটা জঘন্য ব্যাপার। বিগত সরকার উল্টো পথে হাঁটতে গিয়ে আসল পথ পরিহার করেছিল। আসল পথ পরিহার করেছিল বলে অভ্যুত্থান হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপার ১০ বছর, ২০ বছর পর পর হোক আমরা চাই না। ভবিষ্যতে যারাই শাসনভার পাবেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এসব চলবে না।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বিগত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। নির্বাচন কমিশনে সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন, নিয়োগ আইনে কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করা, এক তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, না ভোট চালু এবং নারী নির্যাতন বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদর্শ বিধিমালা সংশোধন করা, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে দলীয় করণমুক্ত করা, দলীয় কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ হিসেবে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা।
অতীতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এদেশের নাগরিকরা রাষ্ট্রের মালিক। কিন্তু বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় এবং এরশাদ আমলেসহ নির্বাচন নিয়ে তামাশা হয়েছে। অথচ আমাদেরকে বলা হয় যে, ভোট পাগল বাঙালি এবং ভোট একটা উৎসবের বিষয় ছিল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভোট দিতে যেত। কিন্তু দেড় যুগ ধরে ভোট তামাশায় রূপান্তরিত হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবর্তে ভোট মানে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং যে অঞ্চলে ভোট হয়েছে সেখানের জনগণ উদ্বিগ্ন থাকত। কখন ওই নির্বাচন ঘিরে সে এলাকার মানুষজন গায়েবী মামলার শিকার হয়। শুধু তাই নয়, বিগত সরকারের আমলে রাতেও ভোট হয়েছে। যা পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত নেই। সেসব নির্বাচনে অসাধু ব্যবসায়ী, ঋণ খেলাপীরা নমিনেশন কিনে নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচন করতে পারায় ধারণা এমন হয়েছিল যে, মনোনয়ন পাওয়া মানে জিতে যাওয়া। কারণ সেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ ছিল। মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে সেসব নির্বাচনে দুর্নীতিবাজরা প্রার্থী হয়েছিল।
রিয়াদ