ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

টানা বৃষ্টি

বাগেরহাটে ভেসে গেছে শত শত ঘের

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাগেরহাটে ভেসে গেছে শত শত ঘের

টানা ভারি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া মৎস্য ঘের নেট দিয়ে রক্ষার চেষ্টা

টানা বৃষ্টিতে শ’ শ’ মাছের ঘের ভেসে গেছে। অতিরিক্ত পানিতে একাকার হয়ে গেছে খাল-নদী, মাঠ ও মাছের ঘের। কোনো কোনো চাষি আবার নেট নিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করছেন। শুক্রবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিরামহীন ভারি বৃষ্টিতে ৭ হাজার ঘের ভেসে চাষিদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে। চিংড়ি সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
মৎস্য বিভাগ জানায়, এবারের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গলদা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার চাষিরা। এর সঙ্গে মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা এলাকার কাজি মিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে। ঘেরের পাড়ের ওপর হাঁটুপানি। নেট, কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কতদূর আছে জানি না।’
সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, মাছ চাষিরা আর্থিকভাবে খুব বিপদে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া যাদের ব্যাংক ঋণ আছে তাদের সুদ মৌকুফ করতে হবে এবং এনজিওগুলো এখন কিস্তি নিতে পারবে না। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরামর্শ দেন তিনি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল। প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়। আবার শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধির করতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেল চুন প্রয়োগ করে পরিমানমত খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মেহেরপুরে বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ফসল
নিজস্ব সংবাদদাতা, মেহেরপুর থেকে জানান, মেহেরপুরে গেল ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে নি¤œাঞ্চলের ফসলের জমি পানিতে তলায়। বৃষ্টি ও বাতাসে ল-ভ- হয়ে গেছে ফসলের মাঠ। পানিতে তলিয়ে গেছে ধানের খেত, কলা, পেঁপে, মরিচ, করলা, কপির বীজসহ উঠতি ফল-ফসল। সদর উপজেলার ময়ামারি সিঙির মাঠের অবস্থা একই রকম। এই মাঠে আবাদ হয়েছে বিভিন্ন ফসল। টানা বৃষ্টিতে হাঁটু সমান পানি চারদিকে।

২ বিঘা জমির ধান লাগিয়েছেন লালন হোসেন। তার মতো এই অঞ্চলের চাষিদের একই অবস্থা। নিচু জমি হওয়ায় জমির ধানও পুরোটাই ডুবে গেছে পানিতে। সদর উপজেলার ময়ামারি গ্রামের চাষি লালন বলেন, পানি আর বাতাসে মাঠে আমার দুই বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, বর্তমানে মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফসল আছে।

বরিশাল নগরীতে জলাবদ্ধতা
স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, গত তিনদিনের প্র্রবল বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে অফিসগামী মানুষ আর শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।  বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করলেও কোনো নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে নদ-নদীতে স্বাভাবিক সময়ের থেকে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি খুলনাবাসীর 
স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, মাত্র এক দুই ঘণ্টার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেই তালিয়ে যায় খুলনার শহরের অধিকাংশ এলাকা। আর ভারি বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। অথচ গত পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে চলছে নগরীতে রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নের কাজ। প্রায় এক হাজার পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে এ কাজ। এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষও হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।

কিন্তু জলবদ্ধতা থেকে সামান্য পরিমাণও মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। নাগরিক নেতারা জানালেন মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। অবশ্য কেসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কাজ শেষ হলে মিলবে সুফল। 
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা যায়, নগরীরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ৮২৩ কোটি ৮৯ লাখ ছয় হাজার টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করে সংস্থাটি। এই প্রকল্পের আওতায় ১৫৮ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার ড্রেন ও ২২ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার খাল সংস্কার করা কথা। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৬৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ওপরে।

সেই হিসেবে কাজ সম্পন্ন ৮২ দমমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া জলাবদ্ধাতা, ড্রেন ও নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক এক সূত্রে গাঁথা বিধায় এই সাথে ৬৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনবিন্যাস প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয়ও হয়েছে ৫৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে কাজ সম্পন্ন ৮৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। 
অপর প্রকল্পের পরিচালক ও কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন এখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজে কালক্ষেপ ও মান নিয়ে কথা উঠায় তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

মাগুরা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুর থেকে জানান, তিন দিনের বৃষ্টিতে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হযেছে। শহরের নিচু এলাকা কলেজপাড়া, পারনান্দুয়ালী পৌর বাসটার্মিনাল, সাহাপাড়া, হাসপাতাল পাড়া, কাউন্সিল পাড়া এলাাকায় জলাবদ্ধতার কারণে জনসাধারণ বিপাকে পড়েছে। অনেক বাড়িতে হাঁটুপানি জমেছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। বাড়ি থেকে তারা বের হতে পারছেন না। ফলে এলাকার বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

×