ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

এভারেস্টের চেয়েও লোৎসে জয় বেশি চ্যালেঞ্জিং ॥ বাবর আলী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২৯ মে ২০২৪

এভারেস্টের চেয়েও লোৎসে জয় বেশি চ্যালেঞ্জিং ॥ বাবর আলী

এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ডা. বাবর আলী

দেশে ফিরেছেন এভারেস্ট এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে জয় করা ডা. বাবর আলী। উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং ফুলেল ভালোবাসায় এই পবর্তারোহীকে বরণ করে নিয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। মঙ্গলবার রাতে নেপাল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম ফেরেন তিনি। বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. বাবর আলী পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি  খোলেন।

জানান অতীত অভিজ্ঞতা, এভারেস্ট জয়ের বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলার আদ্যোপ্রান্ত এবং চ্যালেঞ্জের কথা। তিনি বলেন, এভারেস্ট আর লোৎসের মধ্যে এভারেস্টের কথাই বেশি বলে থাকেন প্রায় সকলে। তবে আমি লোৎসেকে এগিয়ে রাখব। আমি পর্বতারোহণ করি, আমাকে আনন্দ দিয়েছে লোৎসের চূড়া। কারণ সেখানে চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেক বছর ধরে চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পরে এ অভিযান সম্পন্ন করেছি।
অভিযান সম্পর্কে তিনি জানান, এবার অভিযানটা শুরু থেকে প্রতিকূল ছিল। ১০ এপ্রিল নেপালে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত রাস্তা খুলে যায়। এভারেস্টের বাধাগুলোর একটি হলো বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-১ এ যাওয়া। এবার সে রুটটি খুলে যায়নি। কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং।  বৈশি^ক উষ্ণতার ব্যাপারগুলো আছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর কম তুষারপাত হয়েছে। এজন্য রুট খোলেনি। খুম্বু আইসফল  হলো বরফের প্রপাত।

এটি খুবই চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন রকমের বরফ আছে, যেখানে অ্যালুমিয়াম লেডার দিয়ে আরোহণ করতে হয়। প্রত্যেক বছর বেসক্যাম্প থেকে ক্যাম্প-১ যেতে যাওয়ার সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। খুম্বু বরফ প্রপাত এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার সাউথ কোল রুটকে অন্যতম বিপজ্জনক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার তুষারপাতের কারণে সেটি ১০ ঘণ্টার পথ হয়। এটি খুবই সরু। এর পরও অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আমাদের একজন নেপালি সদস্যও পড়ে গিয়েছেন। পরে  হেলিকপ্টারে তাকে রেসকিউ করেছে।
তিনি আরও জানান, খুম্বু বরফপ্রপাত যখন ওপেন হচ্ছিল না তখন আরেকটা ৬ হাজার ১১৯ মিটারের পর্বত আরোহণ করেছি। তাই মূলত এভারেস্ট, লোৎসে এবং এই ৬ হাজার ১১৯ মিটারের পর্বতসহ তিনটি আরোহণ করেছি এবার। মূলত খুম্বুতে যেহেতু যেতে পারছিলাম না, যেহেতু পথটি চলাচলের জন্য উপযুক্ত হয়নি তখন উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ৬ হাজার মিটারের ওই পর্বত আরোহণ করি।

এভারেস্টে ক্ষেত্রে এবার খুম্বু ছিল বিপজ্জনক, বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল। এ ছাড়া ক্যাম্প-৩ থেকে ক্যাম্প-৪ এর রুট ছিল চ্যালেঞ্জিং। এবার তুষার কম হওয়ায় ব্লু আইস বেরিয়ে যায়। বরফের ওপর তুষারের স্তর থাকলে হাঁটতে সুবিধা হয়। বিশ^জুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব পড়েছে। অনেকের প্রশ্ন, হিমালয়ে কেন যাচ্ছি?  কেউ যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং দেখতে চায় তার দেখার সবচেয়ে সেরা জায়গা হলো হিমালয়। এর বিকল্প  নেই।

অনেকে বলেন, কেন যাই। এটি যে শুধু পর্বতারোহণ তাই নয়, কারও যদি দেখার চোখ থাকে অনেক কিছুই দেখার আছে। আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় যে গাছ, তা চার হাজার মিটারে গিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে তাপমাত্রার কারণে। কিন্তু শেকড় বড়। এ রকম অনেক কিছুই দেখার আছে। 
এভারেস্ট জয়ী বাবর জানান, পর্বতারোহণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পৃষ্ঠপোষকতা। সকলের সহযোগিতা নিয়ে অভিযানে গিয়েছি। এভারেস্ট জয় করতে পেরেছি। অনেক তরুণ এভারেস্ট জয় করতে পারবেন। তবে এজন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। তহবিল ও টাকা জোগাড় করা কঠিন, এটি এভারেস্ট জয় করার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

×