ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে চাঁদা আদায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাটখিল, নোয়াখালী 

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে চাঁদা আদায়

চাটখিল পৌরসভা

হাইকোর্টের (রিট পিটিশন নং- ৪৬/৪০/২০২২) এর আদেশ মোতাবেক টার্মিনাল ব্যতিরেকে কোনো সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন করা যাবে না। আদেশে আরোও বলা হয় কেবলমাত্র পৌর মেয়র নির্মিত টার্মিনাল হলে সেই টার্মিনাল থেকে টোল আদায় করা যাবে। টোল আদায় করতে হবে টার্মিনালের ভিতরে, কোন অবস্থাতেই সড়কে টোল আদায় করা যাবে না। 

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাটখিল পৌর মেয়র মোঃ নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মেয়রকে না পেয়ে পৌর সচিব মোঃ আলতাফ হোসেনের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি, বিষয়টি নিয়ে পরে আলাপ করবেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

সেই আদেশ মোতাবেক চলতি বছরের ২১ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে সিটি কর্পোরেশন  ও পৌরসভার মেয়রদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের সেই আদেশ উপেক্ষা করে টার্মিনাল ছাড়াই সড়কে চাঁদা আদায় করছে চাটখিল পৌরসভা। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় চাটখিল পৌর বাজারে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পরীক্ষার্থী, রোগী, সাধারন জনগণ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।  

উপজেলা আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সেপ্টেম্বর মাসের সভায় যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ বিষয়ে চাটখিল প্রেসক্লাব অর্থ সম্পাদক সাংবাদিক জসিম মাহমুদ জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এই যানজট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ন। 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যানবাহন থেকে টার্মিনালের নামে সড়কে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে তিনি দুইজনকে হাতেনাতে আটক করে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই চাটখিল পৌর মেয়র মোঃ নিজাম উদ্দিন তাকে মুঠো ফোনে জানান, আটককৃতরা মেয়রের লোক তাদের ছেড়ে দিতে। তিনি তখন মেয়রের কাছে জানতে চান, চাঁদাবাজ কিভাবে মেয়রের লোক হয়?- মেয়র এই প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। 

এছাড়া যানজট সৃষ্টির আরেকটি কারণ, বাজারে ফুটপাত দখল করে একশ্রেনীর ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ফুটপাত ভাড়া দিয়ে রাখছে। ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলেও যানজট নিরসন হয়ে আসবে। এসময় তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পক্ষে এককভাবে যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিরসনে সাংবাদিকদেরও কলমের ভূমিকাও জরুরী। 

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, চাটখিল পৌর শহরে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার গ্যাস চালিত সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার প্রতিটি থেকে ১০টাকা হারে, ৩২টি লেগুনার প্রতিটি থেকে ২০টাকা হারে, ৪০টি জননী বাসের (মিনি বাস) প্রতিটি থেকে ২০টাকা হারে, শতাধিক পিকাপ ভ্যানের প্রতিটি থেকে ৩০টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। 

এছাড়াও সোনাইমুড়ী থেকে রামগঞ্জ আবার রামগঞ্জ থেকে সোনাইমুড়ী গামী যে কোন যানবাহন চাটখিল পৌর শহর পারাপার থেকে একই হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা শহরে যাতায়াত করা প্রায় ২/৩ হাজার বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহন থেকে বিভিন্ন হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

সরেজমিনে অবস্থানকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাটখিল-সোমপাড়া রুটের এক লেগুনা চালক প্রতিবেদক কে জানান, পৌর সভার নামে ২০ টাকা, থানার টিআইও এর নামে ৩০ টাকা ও লাইনম্যানের নামে ৩০ টাকা সহ মোট ৮০টাকা হারে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয়। 

এছাড়া সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক ও পিকাপ-ভ্যান চালকেরা অনেকে জানান, পৌরসভা ছাড়াও চাটখিল থেকে নোয়াখালী সদরে যেতে পথে পথে পৌরসভা, মালিক-শ্রমিক, থানা সহ বিভিন্ন নামে-বেনামে চাঁদা আদায় করে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব চাঁদা দেওয়ার ফলে চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। 

পৌরসভার বিধানের ৯৮ ধারার ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধু মাত্র পৌর মেয়র নির্মিত টার্মিনাল ছাড়া পার্কিং ফিথর নামে টোল আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ বছরের পর বছর ধরে চাটখিল পৌরসভা ব্যবস্থাপনাধীন পৌর বাস ষ্ট্যান্ড ইজারার স্টপিজ নাম দিয়ে টোল আদায়ের রসিদ দিয়ে সড়কে একাধিক স্থানে চাঁদাবাজি চলছে। অথচ চাটখিল পৌরসভার কোনো বাস টার্মিনাল নেই। পৌর বাজারের সিএন্ডবি’র প্রধান (ঢাকা-চাটখিল-রামগঞ্জ) সড়কের উপর তিনটি স্থানে সিএনজি ষ্ট্যান্ড বসিয়ে, বাজারের ভিতরে উপজেলা গেইটে একটি সিএনজি ষ্ট্যান্ড, সোনালী ব্যাংকের সামনে একটি সহ প্রধান-প্রধান সড়কের উপর ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও সিএনজি ষ্ট্যান্ড বসিয়েও বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায় করছে।

এই বিষয়ে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পৌর শহরের যানজন নিরসনের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। পৌর কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক কোন সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন তা করতে পারে। এর বেশি কিছু আমাদের করার নেই। 

 

এস

×