ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

তবলছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নেই

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তবলছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নেই

মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

সর্দি, কাশি সঙ্গে জ্বর থাকায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে মনির অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এসেছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। উপস্বাস্থ্য সহকারী কিছু ওষুধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দিলেও বাকি ওষুধ কিনতে বললেন বাইরে থেকে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কথা হয় মনিরের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এত বড় হাসপাতাল অথচ কোনো ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। সামর্থ্য নেই যে, মাটিরাঙ্গা কিংবা পানছড়ি উপজেলায় গিয়ে ডাক্তার দেখাব। আমাদের মতো গরিব লোকদের মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই। শুধু মনির নয়, আরও কয়েক নারী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। এ চিত্র মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। 
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে তবলছড়ি খাদ্যগুদাম এলাকায় তবলছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ঝোপঝাড়ে ঘেরা ভুতুড়ে বাড়ির মতো দেওয়ালঘেরা একতলাবিশিষ্ট বিশাল একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটি দেওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদের ওপর থেকে খুলে পড়ছে পলেস্তরা। অধিকাংশ দরজা-জানলা ভাঙা। বারান্দায় এবং হাসপাতালের চারদিকে ঘুরছে কয়েকটি গরু-ছাগল। সে অবস্থাতেই একটি রুমে রোগী দেখছেন উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, দিচ্ছেন ওষুধও। আরেক রুমে বসে আছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন দাই-নার্স। হাসপাতাল থেকে একশ’ গজ দূরে রয়েছে চিকিৎসকদের থাকার জন্য পরিত্যক্ত একতলা তিনটি বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মাটিরাঙ্গা তবলছড়ি পল্লি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার দেবনাথ বলেন, ১২ বছর ধরে একমাত্র আমিই চাকরি করছি এই হাসপাতালে। অনেকে আসেন এক-দুই মাস পর বদলি হয়ে চলে যান, নয়তো প্রেষণে চলে যান। মূলত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু হলে সীমান্তবর্তী মাটিরাঙ্গা উপজেলার বরনাল, তবলছড়ি এবং তাইন্দং এ তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উপকারে আসত। 
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ছাবের আহমেদ বলেন, যে সব চিকিৎসক এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ পান তারা যে কাজ করবে সে যন্ত্রপাতিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই। তা ছাড়া দুর্গম এবং বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় সহজে ওখানে কেউ থাকতে চান না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করতে হলে নতুন করে মেরামত করতে হবে। চিকিৎসা দেওয়ার যন্ত্রপাতি থেকে একটি নতুন হাসপাতাল গড়তে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছু লাগবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত এবং মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। আর খাগড়াছড়ি হাসপাতালে যে চিকিৎসক প্রেষণে রয়েছে তিনি সপ্তাহে দুইদিন গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসবেন। 
খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল জব্বর বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি কিভাবে চালু করা যায় এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন থেকে প্রতি সপ্তায় দুইদিন একজন চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা  দেবেন।
 
তিন চিকিৎসক এক বছরেও কর্মস্থলে যাননি
স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী থেকে জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক বছর আগে তিন চিকিৎসককে পদায়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ একদিনের জন্যও কর্মস্থলে যাননি। তারা গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেই যথারীতি দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে দুর্গম ও প্রত্যন্ত ওই জনপদের মানুষ কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়া রাঙ্গাবালী উপজেলায় আজও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়নি। যদিও বর্তমানে তা নির্মাণাধীন রয়েছে। উপজেলায় বেসরকারি আধুনিক মানের কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রও নেই। ফলে রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষকে চিকিৎসাসেবার জন্য নদীপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলায় কিংবা জেলা শহর পটুয়াখালীতে।
এ অবস্থার নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ন অনুযায়ী সহকারী সার্জন হিসেবে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট উপজেলার  ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডা. তরিকুল ইসলাম, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডা. নোমান পারভেজ এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. নূর উদ্দিন যোগদান করেন। 
অভিযোগ উঠেছে, যোগদানের পর এক বছর কেটে গেলেও রাঙ্গাবালীর নির্ধারিত তিন কর্মস্থলে তিন চিকিৎসকের কেউই একদিনের জন্য যাননি। এ বিষয়ে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পদায়নকৃত ডা. নূর উদ্দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত যাওয়া হয় না বলে স্বীকার করেছেন। তবে এর বেশি কোন তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (রাঙ্গাবালীর দায়িত্বে) ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমি চলতি বছরের মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। রোগী দেখার জন্য ওখানে কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা ব্যবস্থা করলেই ডাক্তাররা যাবেন।

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু এখানে এখনো হাসপাতাল নেই। হাসপাতালের কাজ চলছে। তাই রাঙ্গাবালীবাসীর জন্য নিয়মিত ডাক্তার প্রয়োজন। সিভিল সার্জন ও গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা সেমিপাকা একটি টিনশেড ঘর ডাক্তারদের জন্য প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছি।

আড়াইহাজারে চিকিৎসা দিতে হিমশিম
সংবাদদাতা, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ  থেকে জানান, আড়াইহাজার পাঁচরুখি, রহমতপুর, কুমারপাড়া, ছোট বিনারচর, বড়বিনারচর, পাঁচগাঁও, সত্যবান্দি, মনোহরদি, লস্করদি, সিলমান্দি, কালীবাড়ি, শিবপুর, নৈইকাহন, কান্দাপাড়া, দাশিরদিয়া, মাধবদি, তিলচন্দি, সেন্দি, পশ্চিম আতাদি, পূর্ব আতাদি, কাদির দিয়া, ইলোমদি, গ্রুপদি, নাগ্রাপাড়া, কাইনপুর, কলাগাছিয়া, নারান্দি, বালাপুর, টগুরিয়াসহ আশপাশের এলাকায় ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবক-যুবতীসহ সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।  আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা বলেন, ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তদের নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভাইরাস  জ্বরে আক্রান্তদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এ জ্বর থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা যায়। তিনি আরও বলেন, শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই এই জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

×