ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

পাহাড়ের ওপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ, লাখ লাখ টাকার অপচয়

পার্বত্য প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাহাড়ের ওপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ, লাখ লাখ টাকার অপচয়

ঘাটলা। ছবি: জনকণ্ঠ

বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও সত্য। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পুকুর ছাড়াই ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে এমন ২টি ঘাটলা করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর। যেগুলো কোনই জনকল্যাণে কাজে আসছে না। এতে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকার অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তত্তাবধানে এমন তুঘলকি কাণ্ড ঘটলেও কোন ধরনের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। 

জানা যায়, সারাদেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে জিওবি‘র অর্থায়নে ২০২০-২১ অর্থ বছরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে ৪টি পুকুর খনন ও ঘাটলা নির্মাণ করে এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ)। তার মধ্যে আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদ ও আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলা দুটি কোনই কাজে আসছে না। আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদের নামে যে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়; সেখানে মানুষ যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত নেই। ঘাটলাটি করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর। যেখানে স্থানীয় একটি বকরস্থান রয়েছে। এখানে নেই পুকুরের অস্তিত্ব। মূলত: দুই পাহাড়ের মাঝের গ্যাপকে পুকুর দেখিয়ে এখানে ঘাটলা জায়েজ করা হয়। 

এছাড়া আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলাটিরও একই অবস্থা। ঘাটলায় উঠার পথই নেই। ঘাটলার সামনে পুকুর বলতে কিছুই নেই। তবে প্রায় ৫০ মিটার দূরে হাটু পানি দেখা যায়। জানা যায়, ২০১৯ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ডিজিটাল সার্ভে হয়। প্রকল্প অনুমোদনের পর টেন্ডার হয়েছে। কত টাকায় এসব কাজ হয়েছে জানাতে রাজি নয় এলজিইডির কোন কর্মকর্তা।

আর্দশ পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এমরান হোসেন ও আব্বাস আলী সর্দার পাড়া জামে  মসজিদের রুহুল আমীন জানালেন এলাকায় কোন পুকুর নাই ।মসজিদের পুকুর দেখিয়ে ৭০ /৮০ লাক্ষ টাকার প্রকল্প বানিয়ে তা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই পাহাড়ের উপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ ।এগুলো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দূর্নীতি ছাড়া কিছু নয়। 

এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান, আব্দুর রহিম ও তোফাজ্জল হোসেন জানান এলাকাবাসী হিসেবে কেউই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাহাড়ের উপর পুকুরের ঘাটলা নির্মাণের জন্য আবেদন করেনি। সরকারি খাস জায়গায় দু পাহাড়ের গ্যাপে এ ধরনের গাটলা নির্মাণ দেখে আমরা অভাগ হয়ে যাই, সরকারি টাকার এমন অপচয় দেখে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার ।

দরপত্র অনুযায়ী, কাজটির নির্মাণ কাজ পায় মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিদাকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

কাজটি কিনে নিয়ে করেছিলেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: আলী। তিনি জানান, কার্যাদেশ দেয়া কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ এলজিইডি যেখানে দেখিয়ে দিয়েছে সেখানেই তিনি ঘাটলা তৈরি করেছেন। 

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, এমন প্রকল্প নেয়া উচিত নয়; যেগুলো জনগণের কাজে আসে না। তারা ঘাটলা নির্মানের নামে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

ঘাটলা নির্মার্ণে আদৌ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো: শাহজাহান। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অনুরোধ করায় ক্ষেপে উঠেন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা প্রকৌশলী। 

অবশ্য মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এমন ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের অর্থ ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে কেন ঘাটলা তৈরি করা হলো তা খতিয়ে দেখা হবে। 

এসআর

×