ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে বঙ্গমাতা আবাসন প্রকল্প

পাহাড়ের ১৫ দোতলা ভবন হার মানায় রিসোর্টকেও

ফজলুর রহমান, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১২ আগস্ট ২০২৩

পাহাড়ের ১৫ দোতলা ভবন হার মানায় রিসোর্টকেও

খাগড়াছড়ির শালবন এলাকায় পাহাড়ের  চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প’

খাগড়াছড়ি শহর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের সড়ক ধরে এগোলে বিস্তৃত শালবাগান। বাগানের মাঝ দিয়ে আঁকা-বাঁকা পাকা সড়ক। প্রধান এই সড়ক ধরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনে যেতেই আরেকটি পাকা সড়ক। এই সড়কটিও পাহাড়ের বুকচিরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে চলছে, গিয়ে পৌঁছেছে পাহাড়ের ওপর শালবন এলাকায়। সমতল থেকে কয়েকশ’ ফুট ওপরে এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায়, উঁচুনিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। পাহাড়ের বুক চিরে ঝর্ণাধারায় বয়ে চলছে হিমশীতল শৈলপ্রপাত। দৃষ্টিকাড়া নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর ঠিক এই জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলের অনাথ-ভূমিহীনদের জন্য বঙ্গমাতা আবাসন প্রকল্প। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পের ভবনগুলো সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ও সৌন্দর্যের দিক থেকে যে কোনো ভালো মানের রিসোর্টকেও হার মানায়। যেন পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে উঠেছে এক খ- আধুনিক শহর। 
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬০টি নিঃস্ব পরিবারের জন্য ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্পটি।’ এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ১৫টি ভবন। দুই তলাবিশিষ্ট প্রতি ভবনে চারটি করে পরিবার থাকতে পারবে। প্রতিটি পরিবারের জন্য রয়েছে দুটি বেডরুম, একটি ডাইনিং রুম, রান্নাঘর ও টয়লেট। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শহরের মধ্যে হওয়ায় এখানকার মানুষ চাইলেই বিভিন্ন কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারবেন। সেইসঙ্গে উপকারভোগীদের সন্তান শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে রাখা হবে শিক্ষকও। 
প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে মানসিক প্রশান্তি পেতে দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যান খাগড়াছড়ি জেলায়। এই জেলার পর্যটন স্থানগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। তাই তাদের আতিথেয়তায় জেলাটিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। দৃষ্টিনন্দন সেসব রিসোর্টে একটু সময় কাটানোর স্বপ্ন দেখাও যেন পাহাড় সমান স্বপ্নের মতো এখানকার ভূমিহীন, সহায়সম্বলহীন মানুষদের কাছে। তাই হতদরিদ্র, অনাথ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ভবনগুলো। যেখানকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসনে সারাজীবন বসবাস করবেন উপকারভোগীরা। যা তারা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি। বাস্তবে তা সত্যি হতে যাচ্ছে। 
সরেজমিনে দেখা যায়, শালবাগানের প্রধান সড়কের সঙ্গে প্রশস্ত একটি সড়ক গিয়ে মিশেছে আবাসন প্রকল্পের উঠানে। সেখান থেকে ছোট সড়ক পৌঁছেছে প্রতিটি ভবনের প্রধান ফটকে। প্রতিটি ভবন দোতলা বিশিষ্ট। লাল-সবুজে মোড়া ভবনগুলোর সামনে ও পেছনে নানা রকম গাছ লাগিয়ে ছোট ছোট বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ভবনের ছাদ থেকে উপভোগ করা যায় চারদিকের অপার সৌন্দর্যে মোড়া পাহাড়। পাহাড়ে পাখিদের কলকাকলি জানান দেবে নতুন দিনের সূর্য উদিত হওয়ার আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে পাহাড়ের নির্মল বাতাস ছুঁয়ে যাবে হৃদয়।

এখনো উপকারভোগীদের ভবনগুলো বুঝিয়ে না দেওয়ায় চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। তবে উপকারভোগীরা বসবাস শুরু করলে এক ব্যস্ত নগরীর মতোই হয়ে উঠবে আবাসন প্রকল্পটি। খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, সাত একর জায়গার ওপর অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প’ গড়ে তোলা হয়েছে। ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিহীন ও অনাথদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুতই এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরপর ৬০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি ও মালিকানা হস্তান্তর করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির অনেক জায়গাতেই বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে। এজন্য এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লোডশেডিংয়ে যাতে এখানকার উপকারভোগীদের কষ্ট না হয়, সেজন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

×