
বগুড়ার মহাস্থানগড় হাটে আলুর ঢিবি
আলুর আবাদ ভালো হয়েছে। রপ্তানিও হচ্ছে। তারপরও কেন আলুর দাম বেড়েছে এর কোনো উত্তর মিলছে না। এই বিষয়ে বাজারে খোঁজ খবর করলে পাইকারি ও খুচরা কোনো ব্যবসায়ী সদুত্তর দিতে পারছেন না। তাদের কথা, বেশি দামে কিনছেন বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বগুড়ায় আলুর আড়তগুলোতে একই অবস্থা। খোঁজ নিতে গেলে বলা হয়- দাম তো খুব বেশি বাড়েনি। কেজিতে আট দশ টাকা খুব বেশি নয়। যখন বলা হয় কেজিতে দশ টাকা হলে প্রতি মণে (৪০ কেজি) চারশ’ টাকা বাড়ে। আড়তদারের কথা, সাধারণ মানুষ কি মণ দরে কেনে (কি অদ্ভুত থোরা যুক্তি)। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়।
কিছু দূর গিয়ে কয়েক দোকানির সঙ্গে কথা হলে তারা নিজেদের নাম না ছাপানোর শর্তে বলেন, এই আড়তদাররা সকালে এসে মোবাইল ফোনে দেশের বিভিন্ন এলাকার আলুর বাজারের খবরাখবর নিয়ে যে দাম নির্ধারণ করেন সেই দামেই বেচাকেনা হয়। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পণ্যের দাম কম বেশি করে দেওয়ার যে অসাধু সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায় তাহলে তারা কে! আড়তদার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দেখা যায় (অনেক সময় চেনাও যায়) সিন্ডিকেটের হর্তাকর্তাদের চেনা যায় না। তারা কলকাঠি নাড়েন অদৃশ্য থেকে। কোরবানির ঈদের সময়টায় কলকাঠি নেড়েছেন কাঁচা মরিচ নিয়ে। তারপর আলুর ওপর ঝেঁপেছেন।
দেশে আলুর আবাদ বেড়েছে। আলু আবাদ প্রধান বগুড়া ও জয়পুরহাটে চাহিদা মিটিয়ে ক’বছর ধরে আলু রপ্তানির পথে এগিয়ে গিয়েছে। কৃষি বিভাগের সূত্রের কথা : দেশে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির ৩১ শতাংশের বাজার মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য। বছর কয়েক আগে রাশিয়ায় আলু রপ্তানি বন্ধ ছিল। চলতি বছর ৪ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে আলু রপ্তানির সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। চলতি বছর অল্প আলু রপ্তানি হবে। তবে আগামী বছর অন্তত দুই লাখ টন আলু রপ্তানি হবে রাশিয়ায়।
সূত্র জানায়, চলতি বছর দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ মে.টন। দেশের আলুর চাহিদা সাকুল্যে ৮০ লাখ টন। উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানি হয়। উৎপাদিত আলুর একটি অংশ হিমাগারে রাখা হয়।
প্রয়োজনের সময় তা উত্তোলন করে সাধারণ কৃষক। আলু উৎপাদন প্রধান বগুড়া অঞ্চলে চলতি বছর আলুর চাষ হয় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ টন। জয়পুরহাটে চলতি বছর আলুর আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টন। আলুর উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্টেরিকা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, লাল পাকড়ি ইত্যাদি।
বগুড়া অঞ্চলে লাল আঠালো ছোট এক ধরনের আলু উৎপাদন হয় নাম ‘হাগরাই’। চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দামও বেশি। ক্রেতা সাধারণ এই দাম মেনে নিয়েই আলু কেনেন। ছানাভর্তার জন্য এই আলু খুবই স্বাদের। এই জাতের আলু রপ্তানি হয় না। বিদেশ গমন যাত্রীরা হাগরাই আলু লাগেজে নিয়ে যান। তবে অন্য জাতের আলু রপ্তানি হয়। আলু রপ্তানি সমিতির এক সূত্র জানান, বিএডিসি রপ্তানি উপযোগী দশটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে।
এগুলোর মধ্যে আলু-১ সানসাইন, আলু-৭ টুইনঅ্যানি, আলু-৮ লবেলো আলু-৯ সান্তনা রপ্তানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। উদ্ভাবিত জাতের আলু উৎপাদনে খরচ বেশি। তবে এই আলু রপ্তানি হয় বেশি। দেশে আলু উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আলুর আবাদ হয় ৪ দশমিক ৬৮ হেক্টর জমিতে।