ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বগুড়া-৭

বিএনপির আসনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ

মাহমুদুল আলম নয়ন

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২২ জুন ২০২৩

বিএনপির আসনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ

বগুড়ার বিশেষ পরিচিত সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্যতম বগুড়ার গাবতলী ও শাজাহানপুর

বগুড়ার বিশেষ পরিচিত সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্যতম বগুড়ার গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ নির্বাচনী এলাকা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ি এখানে হওয়ায় বিএনপির কাছে আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। আলোচিত এই আসনটি বিএনপি নিজেদের দাবি করলেও এখানে এখন আওয়ামী লীগ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে নির্বাচন করে তা আবার ছেড়ে দিয়ে থাকেন। এ জন্য বগুড়ার এই আসনে বিএনপি জয়লাভ করা মানে আরেকবার উপনির্বাচন। বগুড়ার এই আসনে দুইবার নির্বাচন হওয়ার বিষয়টিও বেশ আলোচিত। এই নির্বাচনী এলাকাতে শুধু গত দুইবার বিএনপির বাইরে থেকে হায়ার করা নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এখানে দুইবার নির্বাচন হয়নি। বগুড়ার অন্য আসনগুলোর মতো এখানেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানাভাবে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বগুড়ার পূর্ব এলাকার গাবতলী ও দক্ষিণ-পূর্বের শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসনটিতে ভোটার সংখ্যা সাড়ে চার লক্ষাধিক। ১৯৯১ সালে থেকে এই নির্বাচনী আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত একইভাবে তিনি নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে পরে আসনটি ছেড়ে দেন। বেগম খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া আসনটিতে কখনো অন্য জায়াগার বিএনপির পরাজিত প্রার্থীকেও বিএনপি বগুড়ার এই আসনে এনে নির্বাচন করায়। 
সর্বশেষ এখান থেকে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই দুইবার নির্বাচনের আসনটিতে বিএনপি জয়লাভ করলেই নির্বাচনে দাঁড়াতে ইচ্ছুকরা উপনির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। 
সবশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনের প্রার্থিতা বাতিল হলে বিএনপি গোপনে দলীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয়। এ নির্বাচনে অনেকটাই অপরিচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রেজাউল করিম বাবলু। 
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। এ কারণে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ শুরু করেছেন, ভোটারদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। আসনটিতে বিএনপির জয়ের অনুপাত বেশি থাকলেও আওয়ামী লীগের বিশালসংখ্যক ভোটব্যাংক রয়েছে। ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু এক লাখ ৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। 

তবে গত সাড়ে ১৪ বছরে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকায় নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে এখন আওয়ামী লীগের সমর্থন বেড়েছে বলে দলটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দাবি। এ কারণে আগামী নির্বাচনে আগ্রহীদের সংখ্যাও বেড়েছে। আর বিএনপি বলছে, এটি জিয়া পরিবারের আসন। তাই জিয়া পারিবার চাইলে দলের অন্য কেউ এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। তবে স্থানীয় বিএনপি বলছে, তারা কেউ নয়, জিয়া পরিবারই এই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কে প্রার্থী হবেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএমএ বগুড়া শাখার সভাপতি ডা. মোস্তাফা আলম নান্নু জানান, তিনি পাড়া-মহল্লা, বাজার ও গ্রাম এলাকায় বিভিন্নভাবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির সময় এই এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এখানকার মানুষ এখন তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনেক ইতিবাচক হয়েছেন। 
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। তিনি এলাকার সার্বিক জীবনমানের গুণগত পরিবর্তনে যুবসমাজকে কাজে লাগাতে চান। 
এই আসন থেকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলুও মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন। এ জন্য তিনি আগে থেকেই নির্বাচনী ময়দানে গণসংযোগ চালাচ্ছেন বলে জানান। 
গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী রফিনেওয়াজ খান রবিন জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের জন্য তিনি কাজ করছেন। তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করবেন। নির্বাচন সামনে রেখে তিনি অনেক আগে থেকেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন বলে জানান। 
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদ আমলের সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম পিন্টু জানান, তিনি ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। গণসংযোগও শুরু করেছেন। তিনি আশাবাদী, দলের মনোনয়ন পাবেন। জাপা থেকে মনোনীত হয়ে ২০১৪ সালে মহাজোট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহম্মাদ আলতাফ আলীও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে নিকটজনরা জানান। এর বাইরে জাপার লুৎফর রহমান সরকার স্বপন এবং আবদুল্লাহ আল মামুন জাপা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। 
গাবতলী-শাজাহানপুর থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সালে স¦তন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জানান, তিনি স্বতন্ত্রভাবেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই সরকারের সময় তার নির্বাচনী এলাকায় তিনি যত বরাদ্দ এনেছেন এবং যেভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে কোনো সময় হয়নি।
অপরদিকে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ সরাসরি কথা বলতে চাননি। সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু জানান, তারা দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য কাজ করছেন। তিনি কখনো মনোনয়ন চাননি। বেগম খালেদা জিয়াই বারবার তাকে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। 
২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হওয়া গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টন জানান, তারা নির্বাচন নয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে আছেন। বিএনপির দাবি পূরণ হওয়ার পর নির্বাচন হলে জিয়া পরিবারের সম্মতি পেলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

×