ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে বৈশাখী মেলা ঘিরে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২২, ২৬ মার্চ ২০২৩

মুন্সীগঞ্জে বৈশাখী মেলা ঘিরে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

শ্রীনগরে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা

শ্রীনগরে আসন্ন বৈশাখী মেলা উৎসব সামনে রেখে মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় পাল বাড়িতে চলছে হাতি, ঘোড়া, গরু, খরগোশ, টিয়া, কবুতর, পুতুল, বিভিন্ন ধরনের ফল আকৃতির ব্যাংক ও শিশুদের নানান ধরনের খেলনাসহ অন্যান্য মাটি সামগ্রী তৈরির কর্মযজ্ঞ। দিনব্যাপী মৃৎশিল্পী পরিবারের নারী ও পুরুষরা এসব মাটি সামগ্রীর বিভিন্ন কাজকর্ম করে দিন পার করছেন। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের কুমার বাড়িতে আসন্ন বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে মাটির তৈরি হরেক রকমের খেলনা সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। কাঁচা মাটির এসব তৈরিকৃত খেলনা সামগ্রী বাড়ির উঠানে রোদে শুকানো হচ্ছে। এই বাড়িতে চার পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই সমানতালে মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজ করেন। লক্ষ্য করা যায়, মৃৎশিল্পীরা আঠালো মাটি দিয়ে হাতে তৈরি করছেন খেলনা সামগ্রী।

তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটির একেকটি বস্তু তার চিরচেনা রূপ ফিরে পাচ্ছে। রং-তুলির আঁচড়ে মাটির এসব সামগ্রী আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। তন্তরের সমীর পাল বলেন, মাটির খেলনাসহ হাঁড়ি পাতিল তৈরি করেন। আসছে বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এগুলো তৈরি করছেন। পাঁচ কন্যা সন্তানের জনক বলেন, এ পেশায় টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য কোনো আয়-রুজির পথ নেই তার। মেলা উপলক্ষে প্রায় ৩ হাজার পিস বিভিন্ন ধরনের মাটির খেলনা তৈরি করছেন।

সমীর পালের স্ত্রী শিখা রানী বলেন, পাইকারি দরে এসব মাটির খেলনা সামগ্রী বিক্রি করেন তারা। ৫-৫০ টাকা মূল্যে মাটির এসব খেলনা বিক্রি করছেন। পাইকাররা এগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন বৈশাখী মেলা ও উৎসব-অনুষ্ঠানে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সমু পাল ও তার স্ত্রী শোভা রানী বলেন, আগের মতো মাটি সামগ্রীর কদর নেই। দিন-দিন এগুলোর চাহিদা কমে যাচ্ছে। সংসারে বিকল্প কোনো আয়ের উৎস নেই। কোনো পুত্র সন্তান নেই। তাদের ৪টি কন্যা।

জীবন-সংগ্রামে পূর্বপুরুষ সূত্রে পাওয়া এই পেশাটি এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ষোলঘর বাজার সংলগ্ন যতন পাল জানান, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের যুগে মাটির আসবাবপত্র বিলীন হতে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এদিকে সরকারের সুদৃষ্টি না থাকলে মৃৎশিল্প একেবারেই হারিয়ে যাবে। 
এ ছাড়া উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, বাঘড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার হরপাড়া, শ্রীনগর বাজার সংলগ্ন পাল বাড়িতে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এখনো মৃৎশিল্পটি ধরে রেখেছেন। এসব পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ বিভিন্ন পূজার প্রতিমা ও মিষ্টির হাঁড়ি, দইয়ের খোড়াসহ সাংসারিক কাজকর্মে ব্যবহারযোগ্য নানান ধরনের মাটির তৈরি উপকরণ বেচাকেনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

এর আগে মহামারি করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্প পরিবারগুলো নানা সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছেন। হাঁসাড়ার অরুন পাল, মদন পাল, লক্ষণ পাল, সুরন্ড পাল জানান, পূর্বপুরুষদের সবাই এই পেশায় কাজ করে গেছেন। তারা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ৪২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

×