
আবদুল গফুর খান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালির অহংকার। পশ্চিম
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল থেকে দেশ স্বাধীন করতে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন বাজি ধরেছিলেন যারা; তাদেরই একজন মাদারীপুরের গর্বিত সন্তান অপারেশন জ্যাকপটের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ডো আবদুল গফুর খান।
যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর খান বলেন, আমি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাতৃভূমির টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ২৫ মার্চের পরে মাদারীপুর থেকে ১৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা স্টুয়ার্ড মুজিবের গাইডে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বেরুলিয়া, কাঁঠালিয়া, অম্পিনগর ট্রেনিং সেন্টারে যায়, আমিও তাদের সঙ্গেই যাই এবং সেখানে প্রশিক্ষণ নেই।
একপর্যায়ে আমাদের বলা হলো, নদীমাতৃক বাংলাদেশ শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই স্বাধীন করতে পারবে না। এজন্য নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে নৌকমান্ডো বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা আসে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর একান্ত আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ছোট আকারের হলেও নৌকমান্ডো বাহিনী গড়ে তোলা হবে। এক সময় তা বাস্তবে রূপ নেয়।
১৯৬৯ সালে ৫৭ নৌকর্মকর্তা ও নাবিককে ফ্রান্সে সাবমেরিনে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায় পাকিস্তান। ওই ৫৭ জনের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি নাবিক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের গণহত্যা শুরু করলে ফ্রান্সে বসেই ওই বাঙালি নাবিকরা বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যার সংবাদ জানতে পারেন। তখন ১৩ বাঙালি নাবিকের মধ্য থেকে নয়জন গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য।
সেইমতো তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৯ মার্চ ফ্রান্সে অবস্থানরত পাকিস্তানি সাবমেরিন থেকে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে অসীম সাহসীকতার সঙ্গে স্পেনের মাদ্রিদে ভারতীয় দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও ভারতীয় দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স বেদির সহযোগিতায় সেই নয় বাঙালি নাবিককে বিশেষ তত্ত্বাবধানে এপ্রিলের ১০ তারিখে ভারতে নিয়ে আসেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য।
তাদের ভারতীয় সামরিক ও নৌবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাদের পাকিস্তানি পক্ষত্যাগের কারণ জানতে চান। এই নাবিকদের মনোবল, একাগ্রতা ও দেশের প্রতি অদম্য ভালোবাসা দেখে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার শর্মা একটি নৌকমান্ডো বাহিনী তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নন্দা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা রায় চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী নৌকমান্ডো বাহিনী তৈরিতে উৎসাহ দেখান।
পরিকল্পনামতো, ২৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ওই বাঙালি নাবিকদের ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় দিল্লির পার্শ্ববর্তী যমুনা নদীতে বিশেষ নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ নেন। এদের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট এসকে দাস।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং নৌবাহিনী তাদের একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমাদের কাছে ওই ক্যাম্পেই সংকেত আসে, যাদের ভালো সাঁতার জানা আছে; তাদের মধ্য থেকে কিছু যুবক বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেবে। খুব বেশি ঝুঁকি মনে করে অনেকে এই প্রশিক্ষণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন অনেকেই। আমি যেহেতু খুব ভালো সাঁতারু ছিলাম এবং সাঁতারের অভিজ্ঞতা ছিল, তাই আমি নাম লেখালাম।
মাদারীপুর থেকেই ১৭ জন ওই তালিকায় নাম দিলাম। এ অঞ্চল থেকে নৌকমান্ডোর জন্য বাছাই করা ১৭ জন ছিলেন সাজেদুল হক চুন্নু, সাহাবুদ্দিন ভূইয়া, সাইদুর রহমান মনু, মাহাবুবুল আলম মিলন কাজী, আবুল হোসেন, আমি আবদুল গফুর খান, শ্যামল কুমার স্বর্ণকার, হাফিজুর রহমান, আলমগীর হোসেন তোতা জমাদার, আলী আহমেদ, আবিউর রহমান, আবুল বাশার, গোলাম রব্বানী, এমএ রহিম, অলিউর রহমান, সত্যেন বিশ্বাস ও বিধান বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমরা অম্পিনগর থেকে কাঁঠালিয়া প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে আগরতলা হয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কলকাতার দমদমে, দমদম থেকে ব্যারাকপুর এবং ব্যারাকপুর থেকে পলাশীর আম্রকাননে। ওই ক্যাম্পে আগেই সাদা সাদা কিছু তাঁবু তৈরি করা ছিল। আমরা সেখানে যাওয়ার পরে দেখলাম ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতীয় নৌবাহিনী। সেই ক্যাম্পে যাওয়ার পরদিন সকালে এক ভারতীয় নৌকর্মকর্তা আমাদের বললেন, তোমাদের অস্থায়ী সরকারের কিছু লোক এখানে আসবে, তোমরা একটু সাজগোজ করে নাও।
যাই হোক কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, একটা হেলিকপ্টার এলো; সেই হেলিকপ্টারে জেনারেল ওসমানী, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান এলেন। তারা আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বললেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বললেন ‘হে আমার স্নেহের সন্তানেরা, তোমরা বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আসছো, তোমরা কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছো, কেউ নাও নাই। কিন্তু আজকে তোমরা যে প্রশিক্ষণ নেবে, সেটা খুব কঠিন প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তোমরা কি করবে, সেজন্য তোমাদের কাছ থেকে আমি একটা অঙ্গীকারপত্র নেব।
অঙ্গীকারপত্রে তোমাদের একটা সই দিতে হবে।’ সেখানে আমরা নাম লিখে স্বাক্ষর করলাম। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমি যে ট্রেনিং করছি, আমি জেনেশুনে করছি।’ দেশমাতৃকার জন্য সেই প্রশিক্ষণটা আমাদের জীবন-মৃত্যুর প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণটা যদি আমরা সুন্দরমতো সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক সময় বেঁচে থাকব। আর যদি প্রশিক্ষণটা অসমাপ্ত রাখি, তাহলে আমাদের মৃত্যু ঘটবে এটার নামই ‘সুইসাইড স্কোয়াড’। তাই আমরা সই করলাম। আমাদের ফটোসহ সই নিয়ে তারা চলে গেলেন। তারপর শুরু হলো আমাদের প্রশিক্ষণ।
সেখানে যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন, তারা সবাই ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডো। কিছুদিন ট্রেনিং করার পরে আমরা আর পারছিলাম না। কারণ প্রশিক্ষণ এত কঠিন ছিল যে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমাদের পিটি করার পরেই ভাগিরথি নদীতে নামিয়ে দিতেন। নদীতে আমাদের সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সাঁতার কাটতে হতো। ফ্রি স্টাইল সাঁতার করাতেন; সেখানে আমাদের হাতপায়ের পেশি ব্যথা করত, উঠতে পারতাম না।
প্রশিক্ষকরা আমাদের পেশি (মাসেল) ম্যাসেজ করে দিতেন; আবার আমরা সাঁতার করতাম। এভাবে কিছুদিন পরে আমাদের হাঁসের পায়ের মতো একটা ফিংস আসলো; যেটা আমরা পায়ে লাগিয়ে নাক-মুখ ওপরে চিত হয়ে সাঁতার করতাম। এই সাঁতারটার ফলে আমরা অনেক গতিতে সাঁতার করতে পারতাম এবং অনেকক্ষণ সাঁতরাতে পারতাম। এভাবে ১৬-১৭ ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারতাম।
তিনি বলেন, এরপর আমাদের একটা দিকনির্দেশনামূলক প্রশিক্ষণের কথা বলা হলো। আমরা টার্গেটে অপারেশন করব। কিভাবে অপারেশন করব। কেন অপারেশন করব। আমাদের গাইড শুধু আমরা এখান থেকে শিখে যাব। আমাদের আর কোনো গাইড থাকবে না। তাই আমাদের জন্য মাদ্রিদ থেকে আসা পাকিস্তানের সাব মেরিনার ছিলেন। তারা সাবমেরিন থেকে এসে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন। তারাই আমাদের গাইড হিসাবে আমাদের গ্রুপ লিডার হিসাবে নিয়োজিত হন।
তারাও যে নৌকায় থাকতেন, আমরাও সেই একই নৌকায় থাকতাম। তারা আলাদাভাবে থাকতেন না। এইভাবে আমাদের সময় কেটে গেল। দুই মাস দশদিন প্রশিক্ষণের পরে আমাদের নির্দেশ করা হলো যে, কে কোথায় অপারেশনে যাবে। আমাকে নারায়ণগঞ্জে অপারেশন করার নির্দেশ দেওয়া হলো। এটা একটা সেনসেটিভ অপারেশন। এই সেনসেটিভ অপারেশনটাই ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর বলেন, আগস্টের ১ তারিখে আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেল। আমরা ২০ জন ১৩ আগস্টের মধ্যে আগরতলা হয়ে নারায়ণগঞ্জ অপারেশনে আসি। সেখান থেকে ছয়জন একটি নৌকা নিয়ে দাউদকান্দি অপারেশনে চলে যান। বাকি ১৪ জন নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সোনাকান্দা ডকে নোঙ্গর করা জাহাজে অপারেশন করি। ১২ জন নদীর মধ্যে চারটি জাহাজ অপারেশন করি। আর বাকি দুজন ওপরে থেকে স্টেনগান হাতে নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের পর্যবেক্ষণ করে।
নৌকায় কিছু শুকনো খাবার, একটা ‘সায়ানাইড ট্যাবলেট’, এক জোড়া ফিংস, একটা ডেগার, একটা গামছা, রাশিয়ার তৈরি সাত কেজি ওজনের একটা লিম্পেট মাইন এবং প্রতি নৌকায় একটা করে রেডিও। এই ছিল আমাদের অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে আমরা বিস্তীর্ণ এলাকায় বিরাট জাহাজ ধ্বংস করেছি। নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ হয়ে ১৩ তারিখ চাষাঢ়া গেলাম। চাষাঢ়া থেকে আমরা নির্দিষ্ট জাহাজগুলো দেখে নিলাম।
আমার অপারেশনের জন্য নির্ধারণ করা হলো পাকিস্তানি অস্ত্র ও গোলাবারুদবাহী জাহাজ ‘এমভি সুরোজ’। একটা জাহাজ অপারেশন করতে তিনজন লোক দরকার হয়। তাই আমার সঙ্গে ছিলেন এসকে স্বর্ণকার ও আমার ভাই হাবিবুল হক।
তিনি বলেন, সারাদেশে একযোগে অপারেশন জ্যাকপটের জন্য দুটি সাংকেতিক গান ছিল। অপারেশনের একদিন আগে অর্থাৎ ১৪ আগস্ট সকাল সাড়ে সাতটায় আকাশবাণী ‘খ’ কেন্দ্র থেকে গাওয়া হলো পংকজ মল্লিকের গান ‘আমি তোমাকে শিখিয়েছি যত গান’ এর অর্থ হলো অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হও। আমি প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় রইলাম। ১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে সাতটায় বাজবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ‘আমার পুতুল আজি যাবে শ্বশুর বাড়ি’ অর্থাৎ আজ রাত একটার সময় অপারেশন অবশ্যই করতে হবে।
নির্ধারিত দিন ও সময়ে সংকেত পেলাম। পংকজ মল্লিকের গানে প্রস্তুত হলাম এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানে ১৫ আগস্ট রাত একটার সময় অপারেশন শুরু করি। আমি নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা ডকে নোঙ্গর করা জাহাজ ‘এমভি সুরোজ’র নিচে চলে যাই। জাহাজের নিচে গিয়ে ড্যাগার দিয়ে শ্যাওলা পরিষ্কার করে রাশিয়ার দেওয়া লিম্পেট মাইন থেকে লোহার পাত খুলে জাহাজের গায়ে লাগিয়ে দিলাম আর তা চুম্বকের মতো লেগে গেল। আমি মাইন থেকে কুশনক্যাপ খুলে ফেলে দেওয়ামাত্র মাইন একটিভ হয়ে গেলো। ঘড়ির কাঁটার মতো টিক টিক শুরু হয়ে গেল।
আমি ভাটির দিকে চলে যাই এবং ফ্লোটিং জেটির সঙ্গে মাইনটি সেট করে দ্রুত মদনগঞ্জ শীতলা মন্দিরে নিরাপদে আমাদের নৌকায় চলে যাই। কিন্তু আমাদের নির্দেশ ছিল কেবল বা শিকল কেটে দেওয়া। কিন্তু শিকল কাটতে হলে ওপরে উঠতে হবে। তাতে বিপদ ঘটতে পারে। তাই ডাস মাইনটি জেটির গায়ে লাগিয়ে দিতে হয়েছিল। শিকলটা লাগানো ছিল জেটির সঙ্গে এমনভাবে যে, জেটির ওপরে যেতে হয়; কিন্তু আমি ওপরে না গিয়ে নিচেই লাগিয়ে দেই।
ফলে জেটিসহ নিচের দিকে চলে গেল। ফলে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখান বরাবর জাহাজটি একদম পুরা নিমজ্জিত হয়ে গেল। পরে এমভি শেফালি, এমভি শিরিন ও আরও একটি জাহাজসহ মোট চারটি জাহাজ নিমজ্জিত হওয়ার পরে শীতলক্ষ্যা নদী পুরো অকেজো হয়ে যায়। চারটি জাহাজই রাত একটার পরে নদীতে ডুবে যায়। ১৯৭১ সালে ১৫ আগস্ট রাতে আমাদের সাথীরা চারটি বন্দরে দুটি সমুদ্র বন্দর ও দুটি নদী বন্দরে ২৬টি জাহাজ নিমজ্জিত করায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব জানতে পারল যে, মুক্তিযুদ্ধ কোনো প্রোপাগান্ডা নয়, এটা একটা মুক্তিযুদ্ধ এবং এখানে যুদ্ধ হচ্ছে।
ফলে পাকিস্তানি সমর্থক দেশ আর কোনো জাহাজ পাঠাতে সাহস পায়নি। ১৯৭১ সালে ১৫ আগস্ট এই যে অপারেশন করেছিলাম, সে অপারেশনের নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত নৌকমান্ডোরা সারা বাংলাদেশে ১২৬টি পাকিস্তানি গোলাবারুদ ও অস্ত্রবাহী জাহাজ পানির নিচে ডুবিয়ে দিতে দিয়েছে।