ছবি: প্রতীকী
অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলে যাচ্ছেন, ঘরের চাবি কোথায় রেখেছেন মনে করতে পারছেন না, কিংবা পরিচিত কারো নাম ঠোঁটের ডগায় ঘোরাফেরা করছে—এ রকম ছোট ছোট ভুলের সংখ্যা বেড়েছে কি? আধুনিক জীবনের চাপ, ঘুমের অনিয়ম, পুষ্টির ঘাটতি ও মানসিক অবসাদ আমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তবে আশার কথা হলো—এই দুর্বলতা থামানো সম্ভব, এমনকি স্মৃতিশক্তি আরও উন্নত করাও সম্ভব।
ভারতের শারদা কেয়ার হেলথ সিটির চিকিৎসক ডা. ভূমেশ ত্যাগী স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ৫টি অভ্যাসের কথা তুলে ধরেছেন, যেগুলো সহজ হলেও নিয়মিত অনুসরণ করলে ফল মিলবে দীর্ঘমেয়াদে।
মস্তিষ্ক সচল রাখতে যেসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
১. আজীবন শেখার মানসিকতা
বয়স যতই বাড়ুক, শেখা বন্ধ করা যাবে না। মস্তিষ্ক যত নতুন তথ্য পায়, তত তার মধ্যে নতুন স্নায়ু সংযোগ তৈরি হয়।
- নতুন ভাষা শেখা
- কোনো বাদ্যযন্ত্র শেখার চেষ্টা
- শব্দছক, সুডোকু, বা ধাঁধার সমাধান
- বই-পত্র, গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস
- নতুন কোনো দক্ষতা (যেমন: কোডিং, রান্না, শিল্পকলা) রপ্ত করা
২. পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম
ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক সারাদিনের তথ্যকে পরিশোধিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করে।
- প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম
- ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রিন এড়িয়ে চলা
- ঘুমের ঘর যেন অন্ধকার, ঠান্ডা ও নীরব হয়
- রাতে চা, কফি, ভারী খাবার না খাওয়া
- ঘুমের আগে হালকা স্ট্রেচিং বা বই পড়ার অভ্যাস
৩. পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
খাবারের গুণাগুণই নির্ধারণ করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কেমন হবে।
- ওমেগা-৩ (যেমন: সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড)
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: ব্লুবেরি, পালংশাক, ডার্ক চকলেট)
- পর্যাপ্ত পানি পান
- প্রসেসড খাবার ও চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা
- ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যশৈলী (মেডিটেররেনিয়ান ডায়েট) অনুসরণ করা—ফল, সবজি, গোটা শস্য, স্বাস্থ্যকর চর্বি
৪. শারীরিক ব্যায়াম
ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। এতে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে।
- সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম (যেমন: হাঁটা, দৌড়, সাঁতার)
- শক্তি বাড়াতে হালকা ওজন তোলা
- যোগব্যায়াম ও তাইচির মতো ব্যায়ামে শরীর-মন দুটিই লাভবান হয়
- বেশি সময় বসে না থেকে মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ ‘হিপোক্যাম্পাস’ নামক মস্তিষ্কের অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা স্মৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান বা মননশীল চর্চা
- শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও পেশী শিথিলকরণ চর্চা
- নিজের জন্য সময় রাখা—পছন্দের কাজ, প্রিয়জনের সঙ্গে সময়
- অপ্রয়োজনীয় দায়িত্বে ‘না’ বলা শিখুন
- মানসিক চাপ বেড়ে গেলে পেশাদার সহায়তা গ্রহণে দ্বিধা করবেন না
স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধে ম্যাজিকের মতো কিছু নেই। তবে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস বদলে ফেললে মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়বে এবং মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যও আসবে। শেখার আগ্রহ ধরে রাখা, ঘুম, খাবার, শরীরচর্চা ও মানসিক প্রশান্তি—এই পাঁচটি স্তম্ভের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে সুস্থ স্মৃতিশক্তি।
সূত্র: https://www.onlymyhealth.com/habits-that-will-help-boost-brain-memory-12977833177
রাকিব
