ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেয়া পারাপারে অচলায়তন

যমুনায় চরের পর চর

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২ ডিসেম্বর ২০২২

যমুনায় চরের পর চর

যমুনায় একের পর এক জেগে উঠেছে চর। খেয়া পারাপারে অচলাবস্থা

পানি প্রবাহ কমে একের পর এক চর জেগে উঠছে যমুনায়। খেয়াঘাট থাকছে না। খেয়া পারাপারে অচলায়তন। মাঝি, মাল্লাদের অলস সময়। কেউ চলে যাচ্ছে ভিন্ন পেশায়। স্বজনদের বলে যাচ্ছে, যমুনা ভরে উঠলে ফিরবে ঘাটে। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩শ’ নৌকা যমুনার ঘাটে ঘাটে ভিড়ত। সেখানে এখন চরের নিধুয়া পাথার। খেয়ামাঝি গিরিশ বললেন,  ‘যেঙ্কা করে নদী শুকে যাচ্চে মরা গাঙ হতে আর সময় লাগবি ন্যা’ (যেভাবে নদী শুকানো শুরু করছে তাতে মরা নদীর খাতায় নাম উঠবে)।
চলতি বছর শুকনো মৌসুমের শুরুতেই যমুনার পানি নিত্যদিন অস্বাভাবিক হারে কমে চর জেগে উঠছে। এক চর থেকে আরেক চরে পৌঁছতে ট্রানজিট করতে হয়। প্রকৃতি দিনে দিনে নৌপথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। যমুনায় জেগেছে অসংখ্য চর। ডুবোচর পড়েছে কয়েকটি পয়েন্টে। কোথাও চোরাবালি।
নদী শুকিয়ে খেয়া পারাপার রুদ্ধ হয়ে গেলে দূরের চরগ্রামের মানুষকে যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মূল খেয়াঘাট কালীতলা পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ২৪ টি রুটে নৌ চলাচল করে। চর জেগে ওঠায় স্থানীয় ১৫ টি রুট ও আঞ্চলিক ৩ টি সহ মোট ১৮ টি নৌ রুট অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শুকনো মৌসুমে নৌ রুটগুলোর ৬টি কোনো রকমে চালু আছে। মাঝি, মাল্লারা বলছেন,যে হারে চর জাগছে খেয়া পারাপারের দিন বুঝি আর থাকছে না। নৌ রুট রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে খেয়া পারাপারকে ঘিরে খেয়া পয়েন্টে ছোট বাজারে পরিণত হয়ে যে ব্যবসা গড়ে উঠেছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। কেন এত চর জাগছে? অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়, নদীর নাব্য কমে সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে গেছে। ঢলের পানি এসে পলি পড়ে নাব্য আরও খানিকটা কমে দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কথা- নদী ড্রেজিংয়ের পর এই অবস্থা থাকবে না। এলাকাবাসীর কৌতূহল, ড্রেজিং কি পুরো নদী হবে। ড্রেজিংয়ের পর সত্যিই কী চর জাগবে না। কতদিনে যমুনা ঠিক হবে?  এভাবে চর জেগে উঠলে ভবিষ্যতে চরের ওপর দিয়ে হেঁটেই যমুনা পার হওয়া যাবে। চরের ওপর দিয়ে ঘোড়াগাড়িতে করে লোকজন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা যাচ্ছে। পণ্য পারাপার করছে এসব গাড়ি। এই যানবাহনকে আধুনিক করে চরে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে যমুনায় চর পড়েছে অন্তত ১৫শ’ বর্গকিলোমিটার। গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনার চর দৃশ্যমান বেশি। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিই যমুনার চর। এসব চরে যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌকা। স্থানীয়রা জানান কাজলা, বোহাইল, চন্দনবাইশা, কর্নিবাড়ি, চালুয়াবাড়ি, কামালপুর ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের মধ্যে প্রবাহিত যমুনায় অন্তত ৬৫ টি চর পড়েছে। 

বগুড়া অংশের যমুনার ওপর দিয়ে সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, জামালপুরের লোকজন নৌকায় চলাচল করে। সারিয়াকান্দির সঙ্গে পাকুল্ল্যা, সোনাতলা, ধুনট, চন্দনবাইশা, কাজলা, বোহাইল, বেনিপুর, মানিকদাইর, চালুয়াবাড়ি, হাসনারপাড়া, দিঘাপাড়া, কামালপুর, কর্নিবাড়ি, নয়াপাড়া, মথুরাপাড়া, আওলাকান্দি; জামালপুরের মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি; গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বালাসী; সিরাজগঞ্জের কাজীপুর রুটে সরাসরি নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এসব এলাকায় পৌঁছতে খেয়া পারাপার হুমকির মুখে পড়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরগ্রামের মানুষকে।
সারিয়াকান্দির কালীতলা ঘাটের কাছে বসবাসকারীরা বললেন, বছর কয়েক আগে যমুনার ভাটিতে রোহদহ ও চন্দনবাইশা এলাকায় নদীর তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। নদীর গতিপথ পাল্টে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে নদীর উজানে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর। দীঘলকান্দি, হাসনারপাড়া, দেলুয়াবাড়ি, অন্তরেরপাড়া, কালীতলায় গ্রোয়েনের কাছে পানি দ্রুত কমে গিয়েছে। সহজে নৌকা ভিড়তে পারছে না। চরের মানুষের ভোগান্তির পালা শুরু হয় ভর শুকনো মৌসুমে। কিছুদিন আগেও কালীতলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মথুরাপাড়ায় নৌকা ভিড়ত। সেখানেও এখন ডুবোচর। ওই জায়গা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে কুতুবপুরের মাদারগঞ্জ ঘাটেও ডুবোচরের কারণে নৌকা ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে।  

 

×