ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জ বন্যার পানি কমছে

বানবাসিরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ  

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৪ জুলাই ২০২২

বানবাসিরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে

ডেকার হাওড়ের ইসলামপুর গ্রামের বানবাসিদের ঘর-বাড়ি

এরারের বন্যায় বিপর্যয় নেমে এসেছে সুনামগঞ্জের প্রতিটি ভাটির জনপদে ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেকই নিস্ব হয়ে গেছে এদের বেশীরভাগ নিম্ন মধ্যবিত্ত্ব পরিবার ভয়াবহ বন্যার প্রবল স্রোতে ডেউয়ে বিলিন হয়েছে জেলার কয়েকশত বাড়ি-ঘর আবার যে সব বাড়ি-ঘর আছে সে গুলিও ঠিকে আছে কোন মতে সেইসব বাড়ি-ঘর মেরামত সংস্কার করতে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য চাইছেন বানবাসিরা

হাওড়াঞ্চলে যে পরিবারগুলি কিছু দিন আগেও নিজেরা চলার পাশাপাশি অন্য গরিদের সাহায্য সহযোগিতা করতে পেরেছিলেন তাঁরা আজ সরকারি বেসরকারি ত্রাণের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে এমনই এক দম্পতি সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ফাতেমা-নুরুল দম্পতি

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ইকবাল নগরে অবস্থিত সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে গত ১৬ জুন থেকে আছে খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনের দেয়া রান্নাকরা খিচুরী খাচ্ছেন কথা হয় জনকণ্ঠের প্রতিবেদকের সঙ্গে বলছেন খাবারগুলি নষ্ট হয়ে গেছে তবুও খাচ্চি পেটে খিদে তাই এরকম আমোদের মত অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত্ব পরিবার যাঁরা একদিন  নিজেরা অন্যদের দান খয়রাত করত তারাও এখন ভিটে-মাটি, ঘর-বাড়ি হারিয়ে অন্যের দেয়া ত্রাণ অথবা খাবারের দিকে চেয়ে থাকে

শান্তিগঞ্জ উপজেলার, হাসকুড়ি গ্রামের অমূল্য দেব নাথ বলেলেন, ভয়াবহ বন্যার প্রবল স্রোতে ডেউ এইসব ভাটির জনপদের লোকগুলিকে নিস্ব করে দিয়ে গেছে ঘরের সকল আসবাবপত্র হাড়ানোর পাশাপাশি বিলিন হয়েছে মাথা গোঁজার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও কেড়ে নিয়ে গেছে

প্রতিদিন ওইসব বানবাসিদের কাছে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ত্রাণ পৌছে দিচ্ছে তবে তাঁরা বলছেন এইসময় তাদের বেশী দরকার নগদ অর্থ সহায়তার যাতে করে বিনষ্ট হওয়া অধিকগুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র ক্রয় ভেঙ্গে যাওয়া গৃহ গৃহের অংশটুকু মেরামত করতে পারেন

আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন যাঁরা তাঁরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন

এব্যপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেইসব গৃহ হাড়াদের তালিকা করে গৃহ পূণঃনির্মাণ, আংশিক নির্মাণ কিংবা ক্ষয়-ক্ষতি অনুযায়ী নগদ অর্থ সহায়তা প্রধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে

জানা গেছে, এখনো জেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধী অবস্থায় রয়েছে চরম দূর্ভোগে থাকা মানুষগুলো যেন আবারও গোড়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা দ্রুত ভোক্তভোগিদের কাছে পৌছে দেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা বানবাসিদের

আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন সুনামগঞ্জের বানবাসিরা যাঁরা তাঁরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাদের কেউ কেউ সব হাড়িয়ে নিস্ব হয়ে গেছে ঘরে ফেরা মানুষগুলি কোন মতে ঠিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছেন নিজেদের স্বামর্থের শেষটুকু নিয়ে চেয়ে আছেন সরকারি বেসরকারি সাহায্যের দিকে

এখনো জেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধী অবস্থায় রয়েছে চরম দূর্ভোগে থাকা মানুষগুলো যেন আবারও গোড়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজেদের মতো করে

একই অবস্থা এলাকার সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, আজকে এক সপ্তাহ ধরি আমার ঘর থেকে পানি নেমেছে, বোরো সিজনও মানুষের ধান কাটিয়া কিছু ধান পেয়েছিলাম, এগুলো মিলে দিয়ে খাওয়ার চাল করেছিলাম সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে, ঘর চুলা জ্বালানি মতো অবস্থা নাই, নিজে এক বেলা খাইয়া থাকরাম কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চার কান্দন দেখলে বুকটা ফাটি যায় এদেরে কিছু দিতে পারতেছি না সামনে ঈদ খবার নিয়ে কাড়াকাড়ি ঈদের চিন্তা কেমনে করি আপনিই বলেন বলে উল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন এই প্রতিবেদককেব

তিনি বললেন, সেনাবাহিনী শুনছি ত্রাণ দেবে আমাদের এই গ্রামে আশায় আছি কিন্তু এদিকে এখনও একটা মানুষও আইছে না, একদিন চারটা খিচুড়ি পেয়েছিলাম এটাই শেষ চেয়ারম্যান মেম্বার শুনেছি  ঘরের নাম নিচ্ছে আমার ঘরে ছবিটা যদি তুলে দিতেন এভাবে আর্থনাদমাখা কন্ঠে বানবাসিরা কথাগুলি বলেছেন জনকণ্ঠ প্রতিবেদককে

এদিকে ইকবাল নগর এলাকায় বন্যায় তলিয়ে গিয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, বাধ্য হয়েই আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রি কলেজে

ওই এলাকায় আশ্রয় নেয়া শাহেদা বেগম বলেন, নিজের যা সম্বল আছিল সব পানিতে নিয়ে গেছে, খানিত অসুবিধা বাচ্চা-কাচ্চা লইয়া বড় একটা মুশকিলের মধ্যেই আছি এখন বারোইয়া আইছি রাস্তায় যদি কেউ সামান্য কিচ্ছু দেয় তাইলে বাচ্চাগুলার মুখে খাবার দিমু

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা সবদিকে নজর রাখছি, খাবারের সংকট নেই আমরা যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছি, আমাদের সাথে যৌথবাহিনীও কাজ করছে

 

×