ভাষা আন্দেলনের ঢেউ নওগাঁ মহকুমাকেও আন্দোলিত করে। ডা. মঞ্জুর হোসেন, এ্যাডভোকেট এম বয়তুল্লাহ, ডা. আমজাদ হোসেন তরফদার, ডা. শাহ লুৎফর রহমান চৌধুরী মহান ভাষা আন্দেলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকায় অধ্যয়নকালে তাঁরা ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ডা. মঞ্জুর হোসেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র থাকাকালে ঢাকায় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁকে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা থেকে পালিয়ে নওগাঁয় চলে আসেন। এখানেও পুলিশ তাঁর পিছু নেয়। তিনি নওগাঁয় এ্যাডভোকেট মোজাহারুল হক পোনাকে ভাষা আন্দেলনে সহযোগিতা করেন। ডা. আমজাদ হোসেন তরফদার ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি নওগাঁয় এসে ভাষা আন্দেলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তৎকালীন মাদ্রাসা মাঠে (বর্তমানে নওগাঁ বিএমসি সরকারী মহিলা কলেজ) প্রথম ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি সভাপতিত্ব করেন।
১৯৫২ সালে নওগাঁয় মুসলিম লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। ১৯৫৩ সালের ১১ জানুয়ারি মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে সভায় নওগাঁয় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। সেদিন সেই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি হয়েছিলেন মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, সম্পাদক হয়েছিলেন ইমাম উদ্দিন সরদার। এই কমিটিতে অন্যরা ছিলেন এম এ রকীব, মোজাম্মেল হক প্রমুখ। তবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা নওগাঁয় ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টকে নির্বাচনে জয়যুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সকলে নওগাঁয় জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে ঢাকার মিছিলে গুলি চালানোর সংবাদ নওগাঁয় পৌঁছলে প্রতিবাদে মিছিল বের হয়। ধর্মঘটও পালিত হয়। সান্তাহারে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন চ-িপুরের ডা. আফজাল হোসেন। নওগাঁ মহকুমা ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন এ্যাডভোকেট মোজাহারুল হক পোনা। মুসলিম লীগের প্ররোচনায় মোজাহারুল হক পোনা, এমএ রকীব এবং খালেক তাহেরকে কেন বন্দী করা হবে না মর্মে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করা হয়। নওগাঁর ওই সময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে স্থানীয় পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক দেশের বাণী’ সংবাদ প্রকাশ করে।
Ñবিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: