ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

প্রধানমন্ত্রীর অভাবনীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১ অক্টোবর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর অভাবনীয় সাফল্য

২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এখনও পুরো সমস্যাকে জটিল করে রেখেছে। সমাধান কখন কিংবা কিভাবে মহাসঙ্কটকে প্রশমিত করবে তা সময়ই বলে দিতে পারবে। মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন অঞ্চলের অধিবাসীদের সরকার এবং সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা যেভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে তা যেমন মানবিক বিপর্যয়ের এক কলঙ্কিত অধ্যায় একইভাবে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধেরও চরম লঙ্ঘন। যে ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়ে সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব সেখানে বাংলাদেশের মতো এক ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের যে দুরবস্থা তা কল্পনাও করা যায় না। এখানে সিংহভাগ কৃতিত্বের অংশীদার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, মানবিক মূল্যবোধ, দূরদর্শিতা, বিশ্ব পরিসরে তাঁর অসামান্য ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন, অসীম ধৈর্য আর অদম্য সাহসিকতায় এই পর্বত প্রমাণ রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ আজও এতটুকু পিছপা হয়নি, সাধ্যমতে যা করার সবই করে যাচ্ছে। বানভাসি মানুষদের সঙ্কট নিরসন হতে না হতেই অনাকাক্সিক্ষত এই রোহিঙ্গা সমস্যা সারাদেশকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। মনুষ্যত্বের এত অপমান মানবতার এই অসম্মান সভ্যতা বিবর্জিত বর্বর যুগে আমাদের নিয়ে যায়। বেসামাল পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে যে পরিমাণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় তা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমে দৃশ্যমান। যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হয়ে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পরবাসী হতে বাধ্য হয়েছে। অনেক অনাহুত, অরাজক পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পরিমাণ স্থিরচিত্তের প্রমাণ দিয়েছেন তা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব। পুরো সঙ্কটকে তীক্ষè আর সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণসহ সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সমাধানের যথার্থ পথনির্দেশনাও ঠা-া মাথায় ভাবতে পেরেছেন। এক অদম্য নীরব ক্ষুব্ধতা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে আরও মহীয়ান করেছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সত্যিই অবিস্মরণীয়। অভিবাসীদের মানবিক বোধে নিজের পাশে টেনে নিয়েছেন, অভিভাবক হিসেবে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন, সমস্ত ক্রোধ আর ক্ষোভকে অবদমন করে শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছেন। এই এক অভাবনীয় শক্তি আর সামর্থ্য প্রধানমন্ত্রীর যা চরম বিপর্যয়ের মুখেও তাকে স্থিরচিত্তে অনড় করে রেখেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসের সেই রক্তাক্ত অধ্যায় ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন লাগাতার বিপর্যয় আর কখনও এসেছে কিনা তা সত্যিই ভাববার বিষয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা- বাংলাদেশের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত দলিল। যা আজও জাতিকে দিশেহারা করে দেয়। যে দুঃসময় পার হতে বাঙালীকে ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যে দেশাত্ববোধের দায়বদ্ধতা আর আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত অভিযাত্রা পাড়ি দিতে হয়েছে তা যেমন লড়াকু প্রেরণায় দীপ্ত একইভাবে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যিক ধারারও অভাবনীয় শক্তি। আর এই শক্তির পতাকা যাঁদের ভূমিকায় অনবদ্য হয়েছে সেখানে বঙ্গবন্ধুকে কর্ণধার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বসাতে হবে অন্যতম আর এক শ্রেষ্ঠ আসনে। নিজ দেশের বলয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী গেলেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগদান করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু গেলেন নয়। অনাকাক্সিক্ষত সঙ্কটের সমাধানে সারাবিশ্বে সাড়া জাগালেন। নিরাপত্তা পরিষদের পরাশক্তির মধ্যে এই বিবদমান রোহিঙ্গা সমস্যার মতবিরোধ থাকায় শেখ হাসিনা বিব্রত না হয়ে ঠা-া মাথায় সেই অবস্থানেও নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করলেন। প্রতিটি দেশের নিজস্ব জায়গা আর হরেকরকম স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপার মাথায় রেখে তিনি একেবারে সমস্যার যথার্থ চিত্র যা শুধু মুসলিম হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে না তাকে মানবতার অসম্মান হিসেবেও তুলে ধরতে সক্ষম হলেন। আর এই অমানবিক, বীভৎস ঘটনাপরম্পরা শুধু জাতিগত নিধনই নয় তা যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ সুষম ব্যবস্থাকে টালমাটাল করে দিতে পারে যা একটি দেশের স্বাধীন আর সার্বভৌম অবস্থার প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে মাথাচাড়া দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। এমন অরাজক পরিস্থিতিকে দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে তা দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনকেও অস্থির করে তুলতে পারে। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই তাহলে প্রতীয়মান হবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা লাভের পর তাঁকে হরেকরকম সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে ডিসেম্বর মাসে তাঁর দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠা অর্জন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক নেৃতত্বে। ২০০৭ সালে ১-১১তে যে অনির্বাচিত সরকারে পুরো দেশটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে শাসন কার্য চালিয়ে যাচ্ছিল সংবিধান প্রদত্ত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা বলে। তা জাতির জন্য মঙ্গল নয় ভেবে এই ধরনের অস্থায়ী সরকারকে বিলুপ্ত করতেও তিনি দ্বিধা করেননি। ক্ষমতায় আসার ২ মাসের মধ্যেই তাঁকে সামলাতে হয়েছিল পিলখানার রক্তাক্ত অধ্যায়কে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে কতিপয় বিভ্রান্ত সীমান্তরক্ষী সেনা সদস্যের রক্তক্ষয়ী অভিযানে যখন সারাদেশ প্রকম্পিত সেই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্ব এবং ঠা-া মাথায় বিরূপ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা এক অভাবনীয় কৃতিত্ব। যা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে বিস্ময় জাগায়। প্রতিপক্ষ শক্তি কখনও স্থিরভাবে দেশ শাসন করতে দেয়নি তাঁকে। প্রতিটি প্রতিকূল পরিবেশে অনমনীয় অবিচলতা এবং দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে যেভাবে প্রমাণ করেছেন একজন সুদক্ষ জননেত্রী হিসেবে তার কোন তুলনাই নেই। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সংঘর্ষের উত্তাল সময়েও তিনি ছিলেন এক অবিচল দৃঢ়শক্তি। সব ধরনের সহিংসতা এবং তা-বকে সুষ্ঠু বাস্তবোচিত সমাধান দিতে তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের কোন বিকল্প হয়নি কখনও। ২০১৩ সালে সারাদেশ থেকে আসা হেফাজতী ইসলামের নারকীয় উন্মত্ততার সঙ্গে বিএনপির নিরবচ্ছিন্ন ষড়যন্ত্রে জাতি যখন উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত সেই সময়টিতে বিনা রক্তপাতে এমন বেপরোয়া উন্মাদনাকে সুস্থির অবস্থায় নিয়ে আসাও প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সাফল্য টানা ২ বছর যে রাজনৈতিক সহিংসতায় বিএনপির জ্বালা-পোড়াও আর হত্যাযজ্ঞের অভিযান সেখানেও শেখ হাসিনার চিরস্থায়ী মননশক্তি আর প্রজ্ঞা আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে যে জাতীয় নির্বাচন সেখানে খালেদা জিয়ার নেৃতত্বে জামায়াত-বিএনপির সহিংস উন্মাদনায় নিরীহ জনসাধারণের জানমালের ওপর যে বিধ্বংসী হামলা সেটাও ছিল অনিয়ন্ত্রিত এক রাজনৈতিক অস্থিরতা। যা স্থির আর শান্ত হতে সময় লাগলেও প্রধানমন্ত্রী নিজের সাবলীল দৃঢ়প্রত্যয়ে তাও সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছিলেন। দেশকে সমস্ত সংঘর্ষ আর সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে যা যা করার প্রয়োজন ছিল সবটাই তাঁকে করতে হয়েছে অবিচলিত মনোবল আর রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মাধ্যমে। শুধু যে প্রতিপক্ষ শক্তিকে সামলাতে হয়েছে বার বার তা কিন্তু নয়, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সমূহ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতেও তাঁর শক্তি, শ্রম আর মেধাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে হয়। মাঝে মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেলেও সামগ্রিক পরিস্থিতিকে শেষ অবধি একটি সুস্থির স্থানে পৌঁছে দেয়াও তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবনের একটি বিশেষ কাল পর্ব থেকে যে সংগ্রামী অভিযাত্রা শুরু হয় সেখান থেকে এখনও তাঁর বের হওয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই রক্তক্ষয়ী বিভ্রান্ত সেনা অভিযানের পরিণতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে পারিবারিকভাবে নিঃস্ব আর রিক্ত হতে হয়। একমাত্র বোন শেখ রেহানাকেই শুধুমাত্র পেয়েছিলেন। স্নেহশীল পিতা-মাতা আর ভাইদের হারিয়ে যে অবর্ণনীয় শোকাবহ তাঁর বাকি জীবনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায় তা যেমন বেদনাদায়ক একইভাবে সংগ্রামী ঐতিহ্য গড়ে তোলারও এক অনবদ্য জীবনগাথা। যে জীবন কখনও নিরাপদ আর নির্বিঘœ ছিল না। শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্য, পর্বতপ্রমাণ প্রতিবন্ধকতা, স্বাধীনতাবিরোধীদের নানা মাত্রিক ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে জীবন বিপন্ন করার মতো দুর্ঘটনারও মুখোমুখি হতে হয়। ’৭৫-এর পর থেকে তাঁর চারপাশে যে অপতৎপরতা, প্রতিপক্ষের হীন চক্রান্ত তার ওপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের টানাপোড়েন তো আছেই। সুস্থ আর স্বাভাবিক পথে রাজনৈতিক সংগ্রামে তিনি অবতীর্ণ হতে পারেননি। শুধু দেশপ্রেম আর আদর্শিক চেতনার মধ্যে তাঁর লড়াই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করার মূল্য তাঁকে সব সময়ই দিতে হয়েছে। আর সেই কারণে জীবন কখনও নিরাপদ ছিল না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছিল শুধু বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ উত্তরসূরিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হীন চক্রান্তে। এখানে প্রতিপক্ষ শক্তি পরাভূতও হয়। উদ্দেশ্য সফল না হওয়া এবং এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের কলঙ্কিত নায়ক হিসেবে বিএনপির নেতানেত্রীরা যেভাবে ইতিহাসের কালো পর্বে চিহ্নিত হয়ে থাকলেন তার দায়ভাগ তাদের জীবনভর বহন করে যেতে হবে। শেখ হাসিনাকে বার বার এই অপতৎপরতা, অপকৌশল আর হীনচক্রান্তকে সম্মুখ সমরে পরাভূত করে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। শুধু এগিয়েই যাননি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে অসম সাহসিকতায় মোকাবেলাও করেছেন। পাশাপাশি সারাদেশে সমৃদ্ধির জোয়ারও এনেছেন। সব ধরনের আর্থ-সামাজিক আর রাজনৈতিক বিরোধকে দক্ষতার সঙ্গে সামলিয়ে গত কয়েক অর্থবছরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধিকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। এটাও অর্থনৈতিক মানদ-ে কম বড় সাফল্য নয়। এর পরও আছে জঙ্গী আর মৌলবাদের সশস্ত্র উত্থান। সেখানেও তিনি অবিচলিত এক দৃঢ় প্রত্যয়ী। যথাসম্ভব রক্তক্ষয়কে পাশ কাটিযে জঙ্গীবাদকে পরাভূত করতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল অভিযান প্রধানমন্ত্রীর এক যুগান্তকারী অর্জন। চিরায়ত বাঙালী নারীর সত্যিকারের প্রতীক আর প্রতিনিধি শেখ হাসিনার অনির্বাণ দীপ্তি দেশীয় এতিহ্য আর চেতনাকে লালন-ধারণ করে জাতীয় জীবনে যে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সেখানে তিনি অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য এবং অনধিগম্য। লেখক : সাংবাদিক
×