ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

৭ বছর পর রাজন হত্যার তদন্ত শুরু: বিচারের আশায় পিতার দীর্ঘ লড়াই

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১১ মে ২০২৫

৭ বছর পর রাজন হত্যার তদন্ত শুরু: বিচারের আশায় পিতার দীর্ঘ লড়াই

ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহে রাজন হত্যা মামলায় ডিবির সাবেক ওসি আশিকুর রহমান আশিকসহ ১৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই।

আট বছর আগে কথিত ক্রসফায়ারে প্রাণ হারান রাজন মিয়া। নিহত রাজনের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশকে চাহিদা মতো ১০ লাখ টাকা দিতে না পারায় তাকে হত্যা করা হয়। বর্তমানে আশিকুর রহমান আশিক পিরোজপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ মে গোয়েন্দা পুলিশ ময়মনসিংহ নগরীর পুরোহিতপাড়ার বাসা থেকে রাজন মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। রাজনকে বাঁচাতে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দিতে না পারায় দুদিন পর বাসার পাশেই ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। ২০২3 সালের ২০ অক্টোবর রাজনের বাবা হারুন অর রশিদ ময়মনসিংহ আদালতে আশিকসহ ১৭ জনের নামে মামলা করেন। এরপর গত ২৩ এপ্রিল আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—পরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এসআই আকরাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদ, এএসআই জিন্নাত হাসান মানিক, এএসআই জাকির হোসেন, এএসআই জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবীব, গুলজার, সোহরাব আলী, সাইদুল, সেলিম, রাশেদুল, সানোয়ার ও কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম।

২০১৭ সালের ৫ জুলাই ময়মনসিংহ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আশিকুর রহমান আশিক। কিন্তু বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই তাঁকে বদলি করা হয়। এই সময় তিনি ২২ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যার নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে মোখলেছুর রহমান ও শাহ কামাল আকন্দের সময়ে আরও ১৬ জনসহ মোট ৩৮ জন নিহত হন।

সম্প্রতি পুরোহিতপাড়া গিয়ে কথা হয় রাজনের পরিবারের সঙ্গে। তার একমাত্র মেয়ে হাবিবা রশিদ নুসাইবা এখন দাদা-দাদির কাছে বড় হচ্ছে। সে এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। রাজন নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রীকে পুনর্বিবাহ দেওয়া হয়। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে নুসাইবা। প্রশাসনের কাছে সে তার বাবার হত্যার বিচার চেয়েছে।

রাজনের মা নাজমা আক্তার বলেন, “কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তার শরীরে জ্বর ছিল। কোনো মামলা ছিল না। বলেছিল, কথা আছে। কিন্তু দুদিন পর ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে, ভাবিনি।”

বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, “১০ লাখ টাকা দিতে না পারায় ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিচার চাই। ন্যায়বিচার পেলে দেশে আর কেউ এভাবে মারা যাবে না। বর্তমান প্রশাসনের ওপর আস্থা রেখেই মামলা করেছি।”

শুধু রাজন নয়, একইভাবে মুন্না, পায়েল ও ইদ্রিসকেও কথিত মাদক কারবারের অভিযোগে হত্যা করা হয়। পায়েলের মা পারুল বেগম বলেন, “৫ লাখ টাকা চেয়েছিল পুলিশ। দিতে না পারায় গুলি করে মেরে ফেলেছে আমার ছেলেকে।”

নাগরিক সমাজ ময়মনসিংহের সদস্যসচিব সামসুদ্দোহা মাসুম বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার আমলে পুলিশ কনট্রাক্ট কিলিং করেছে। বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও বাড়বে।”

অভিযোগ সম্পর্কে আশিকুর রহমান আশিক বলেন, “অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এখন এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বিচার মাথা পেতে নেব।”

পিবিআই পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সময় লাগছে। তবে আমরা যথাসময়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দেব। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”

সা/ই

×