
ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি রাষ্ট্রের জোট আসিয়ান (ASEAN) বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এশিয়ার বাণিজ্য ও রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী এই জোটের প্রতিবেশী হয়েও বাংলাদেশ এ পর্যন্ত সংগঠনের সদস্য হতে পারেনি। তবে চলমান কূটনৈতিক তৎপরতা এবং আসন্ন আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বাংলাদেশের জন্য নতুন আশার বার্তা হতে পারে।
আসিয়ানের যাত্রা শুরু ১৯৬৭ সালে, যখন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব দূর করার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাংককে একটি আঞ্চলিক জোট গঠন করে। পরবর্তীতে ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া এতে যোগ দেয়। সময়ের সাথে জোটটি শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তা নয়, এশিয়ার বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
ভৌগোলিকভাবে বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থানের সুবাদে শুরু থেকেই আসিয়ান সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সদস্যপদ অর্জনের মাধ্যমে দেশের পণ্যের জন্য ৭০ কোটির বেশি জনসংখ্যার বিশাল বাজারে প্রবেশের সুযোগ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও যোগাযোগ বাড়ানো এবং ভারতনির্ভরতা হ্রাস করাই ছিল অন্যতম লক্ষ্য।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ আসিয়ানের রিজিওনাল ফোরামের সদস্যপদ পেলেও পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস নতুন করে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরছেন। তিনি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং থাইল্যান্ডে বিমস্টেক সম্মেলনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসিয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লক "রিজিওনাল কমপ্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ" বা RCEP-এর সাথেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে, যার সম্মিলিত জিডিপি ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমানে আসিয়ান অঞ্চল নিজেই ৪ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করছে, যেখানে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক অংশগ্রহণ এখনও সীমিত, যা মোট বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ।
অনেকেই মনে করেন, আসিয়ানে সদস্যপদ অর্জনের ফলে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে, প্রযুক্তি আদান-প্রদান সহজ হবে এবং একটি গতিশীল অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সার্কের তুলনায় দ্রুত অগ্রসর হওয়া এই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের সামঞ্জস্যও তৈরি হবে।
তবে এই পথে রাজনৈতিক কূটনীতির চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর স্বার্থ ও শর্তকে সম্মান করা এবং চীনের প্রভাবকে সমন্বয় করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আসন্ন ৪৬তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। সেখানেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সদস্যপদের প্রস্তাব নতুন করে উত্থাপন করা হতে পারে।
আঁখি