
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে এবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করে বলছেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়ে রাজশাহী নগর বিএনপির কিছু নেতা সংগঠনের অভ্যন্তরে হাইব্রিড পুনর্বাসন করছেন।
রবিবার রাজশাহী নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগরীর বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু। এ সময় নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটসহ অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে এখন হাইব্রিডের বাম্পার ফলন হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পকেট কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যে-সব আওয়ামী সন্ত্রাসীর হাতে অতীতে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তাদেরকেই এখন নগর বিএনপির কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন।
বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান পিন্টু আরও বলেন, রাজপাড়া থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ, মাহমুদুল হক রুবেল, হারুনুর রশিদ (সাবেক জাসদ নেতা), আব্দুর রাজ্জাক (সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা) এবং কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা বদর বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাদের এখন বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এছাড়া সিটি নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে প্রচারণা, ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা, র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার মতো ঘটনাও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, নওহাটার সালাহউদ্দিন মিন্টুর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করে তার বাবাকে হত্যা, নিউমার্কেট এলাকায় রিয়াজকে কুপিয়ে হত্যা এবং কাদিরগঞ্জে রিকশাচালক গোলাম হোসেনকে খুনের ঘটনার অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই অতীতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুনের আশ্রয় রয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া রাজশাহী সড়ক পরিবহণ সমিতি দখলের অভিযোগও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, নগর বিএনপি নেতা নজরুল হুদা, মামুনুর রশিদ মামুন ও মনিরুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট এই সমিতি দখল করা হয়। নজরুল ইসলাম হেলালকে অবৈধভাবে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। মামুন আগে পেশিশক্তির মাধ্যমে বাস মালিক সমিতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
সাইদুর রহমান বলেন, নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিপুল অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের সময়কার হামলা ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের রক্ষা করতে বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন। আবার মামলার ভয় দেখিয়ে নিরপরাধ ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সংগঠনের ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও অনিয়ম ও লেনদেনের অভিযোগ উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে। এতে রাজপাড়া থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও মাহমুদুল হক রুবেল অভিযোগ করেন, তাদের না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তারা কোনো রাজনীতিতে যুক্ত নন,এজন্য তারা পদত্যাগ করেন। এখানে এক যুবলীগ নেতাকে পদ দেওয়া হয়।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আব্দুল মমিনকে তার সিটি নির্বাচনে তাকে সহযোগিতা করাসহ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার কথাও অভিযোগ তুলে ধরা হয় নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনের বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনের পর যোগাযোগ করা হলে নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দল, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করুন।
মামুন-অর-রশিদ/ফারুক