
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৪ জুলাই কোপা আমেরিকার রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জয়ের উল্লাস করে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা
আরও একটি বছরের সমাপ্তি। শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫। বিদায়ী বছরের আনন্দ-বেদনা ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় গোটা দুনিয়া। তারপরও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০২৪ সালের কিছু ঘটনা লেখা থাকবে ইতিহাসের সোনালি পাতায়। যার মধ্যে টানা দ্বিতীয়বার কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনার নতুন ইতিহাস গড়ে এবং রেকর্ড সর্বোচ্চ চারবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে আলাদাভাবেই নজর কাড়ে স্পেন।
ক্লাব ফুটবলে যথারীতি দাপট দেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তাছাড়া, ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে ব্যালন ডি’অর জিতে ম্যানসিটির রদ্রি যেমন বাজিমাত করেছেন তেমনি ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ অ্যাওয়ার্ড জিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রও। ২০২৪ সালে বিশ্ব ফুটবলে ঘটে যাওয়া এমন সব আলোচিত কিংবা স্মরণীয় সাফল্যের গল্প নিয়েই আজকের এই ‘ফিরে দেখা’ প্রতিবেদন।
অদম্য আর্জেন্টিনা ॥ আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন চলছে আর্জেন্টিনার একক রাজ। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের পরের বছরই স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয়ের নজির গড়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। চলতি বছরেও অসাধারণ সেই পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে মেসি-মার্টিনেজরা। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় লিওনেল স্কালোনির দল। সেই সঙ্গে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৬ বার কোপার শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা।
এর আগে ১৫টি শিরোপা জিতে উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ছিল মেসিবাহিনী। শুধু তাই নয়? একমাত্র দল হিসেবে কোপা আমেরিকা, বিশ্বকাপ এবং কোপা আমেরিকা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তিও গড়ে আর্জেন্টিনা। এর আগে ইউরো জিতে এমন র্কীতি গড়েছিল স্পেন। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো; টানা তিনটি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতে বিরল এক রেকর্ড গড়ে ছিল স্পেন।
ইউরোতে স্প্যানিশ রাজ ॥ ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট ইউরোতে আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। ২০২৪ ইউরোর ফাইনালে লা রোজারা ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ে। আর তাতেই প্রথম দল হিসেবে রেকর্ড সর্বোচ্চ চারবার ইউরো খেতাব জয়ের নতুন ইতিহাস গড়ে। তিনবার ইউরোপ সেরার মুকুট পরে তাদের পরেই রয়েছে শক্তিশালী জার্মানি। এর আগে ২০০৮ এবং ২০১২ সালে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জয়ের নজিরও গড়েছিল স্পেন। এবার ইউরো জয়ের পর স্পেনের লক্ষ্য এখন বিশ্বকাপ ট্রফি পুনরুদ্ধার।
রদ্রির চমক, ভিনি ‘দ্য বেস্ট’ জুনিয়র, ছবির মতোই সুন্দর ডি মারিয়ার অবসর ও মেয়েদের ফুটবলে বোনমাতি শো ॥ বেশ জোরালো গুঞ্জন ছিল এবার। ভিনিসিয়াস জুনিয়রই জিতবেন ব্যালন ডি’অর। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগেই বদলে যায় চিত্রনাট্য। ভিনির পরিবর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন রদ্রি। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ের নজির গড়েন ম্যানচেস্টার সিটির এই স্প্যানিশ তারকাই।
ভিনিসিয়াসের ব্যালন ডি’অর না পাওয়ার খবর আগেই পৌঁছে যায় গত রিয়াল শিবিরে। বেজায় ক্ষুব্ধ হওয়া স্প্যানিশ ক্লাবটি তাই বয়কট করে সেই অনুষ্ঠান। তবে ভিনিসিয়াস জুনিয়রও যে সময়ের সেরা ফুটবলার তার প্রমাণ পেতেও খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। চলতি মাসের মাঝামাঝিতেই সেই রদ্রি আর ক্লাব সতীর্থ জুড বেলিংহ্যামকে পেছনে ফেলে ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ অ্যাওয়ার্ড নিজের শোকেসে তোলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কাতারের দোহায় জমকালো অনুষ্ঠানে ভিনির হাতে সেই পুরস্কার তুলে দেন ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
এদিকে, স্বপ্নের মতো ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে ২০২৪ সালে আলোচনায় ছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও। তার ক্যারিয়ারের শেষটাও ছিল ঠিক ছবির মতোই সুন্দর। এ বছরে কোপা আমেরিকা জয়ের পরই জাতীয় দলের জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০২১ সালে মারাকানায় তার গোল দিয়েই আর্জেন্টিনা শুরু করেছিল শিরোপা জয়ের এক যাত্রা। এরপর থেকে আরও দুই শিরোপা জয়ের সাক্ষী হয়েছেন।
২০২২ সালের ফিনালিসসিমা আর বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছিলেন। তবে জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে গোল না পেলেও লিওনেল মেসির অনুপস্থিতিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডি মারিয়াই। যে কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও জিতেছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনালের। স্পেনকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে গত বছরই প্রথমবারের মতো জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার। চলতি বছরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই পুরস্কার জেতেন আইতানা বোনমতি। শুধু তাই নয়? টানা চার বছর ধরে স্পেনের মেয়ে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়া বোনমাতি টানা দুইবার ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ নারী ফুটবলারের অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন ২০২৪ সালে।
২০২৪ সালে আলোচিত ঘটনার মধ্যে কিলিয়ান এমবাপের দলবদলও অন্যতম। দীর্ঘ সাত বছরের পিএসজি অধ্যায়ের ইতি টেনে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদে নতুন করে ঠিকানা গড়েন তিনি। স্বপ্নের ক্লাবে ইতোমধ্যেই দুটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতে নিজের জাতও চিনিয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন লিওনেল মেসিও। যার মধ্যে কোপা আমেরিকা ছাড়া ইন্টার মিয়ামির হয়ে প্রথম ট্রফি সাপোর্টার্স শিল্ড জেতাটাও ছিল এলএম টেনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।