ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

দ্রুততম মানবী হয়ে জুলিয়েনের ইতিহাস

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৪ আগস্ট ২০২৪

দ্রুততম মানবী হয়ে জুলিয়েনের ইতিহাস

.

সেন্ট লুসিয়া ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নেয়। আটলান্টায় মাত্র অ্যাথলেট নিয়ে শুরু। একে একে সিডনি, অ্যাথেন্স, বেজিং, রিও ডি জেনিরো কিংবা টোকিওতে অ্যাথলেটের সংখ্যা বাড়েনি। কারণ কখনই অলিম্পিক পদক জিততে পারেনি তারা। এবার সেই লাখ ৮০ হাজার মানুষের দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট লুসিয়া প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জয়ের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জিতে সেই ইতিহাস রচনা করেছেন জুলিয়েন আলফ্রেড। ২৩ বছর বয়সী এই তারকা জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং গড়ে। মাত্র ১০.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে শেষ করে এবার অলিম্পিকের দ্রুততম মানবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর ডোপপাপের অন্ধকার অমানিশা কাটিয়ে অলিম্পিকে ফেরা যুক্তরাষ্ট্রের শাক্যারি রিচার্ডসন অনেক পিছিয়ে থেকে (১০.৮৭ সেকেন্ড) রৌপ্য জিতেছেন। তারই স্বদেশী মেলিসা জেফারসন ১০.৯২ সেকেন্ড টাইমিংয়ে জিতেছেন ব্রোঞ্জ পদক। তবে হিটে ১০.৯২ টাইমিং করে সার্বিকভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জ্যামাইকার অভিজ্ঞ স্প্রিন্টার শ্যালি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস ইনজুরির কারণে সেমিফাইনাল ফাইনালে অংশ নেননি।

প্যারিসে স্টেড ডি ফ্রান্সের অ্যাথলেটিক ট্র্যাকে শনিবার রাতে প্রচুর দর্শক সমাগমও ছিল। মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের দিকেই নিবদ্ধ ছিল সবার দৃষ্টি। মাত্র ১১ সেকেন্ডের লড়াইয়ে নতুন কেউ অলিম্পিকের দ্রুততম মানবী হবেন। কারণ এবার নেই জ্যামাইকার তিন গতির রানী অ্যালেইন থমসন-হেরাহ, শেলি-অ্যান শেরিকা জ্যাকসন। সেমি থেকে বাদ পড়েন ব্রিটিশ তারকা দিনা অ্যাশার-স্মিথও। ফেভারিট হিসেবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মূলত দুই মার্কিন স্প্রিন্টার শাক্যারি মেলিসা। কিন্তু গতির ঝড় তুলে সবার চেয়ে এগিয়ে যান জুলিয়েন। তিনি স্বর্ণ জিতবেন এমন ধারণা না থাকলেও দুই মার্কিন নারীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়বেন তা অবধারিতই ছিল।

কারণ হিটে পঞ্চম সেরা টাইমিং করলেও সেমিতে ১০.৮৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবার সেরা হয়েছেন জুলিয়েন। ধাপে ধাপে উন্নতি করে ফাইনালে ঝড়ের বেগে নিজের সেরা টাইমিং ১০.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক ছুঁয়েছেন। দেশের পক্ষেও সেরা টাইমিং গড়েছেন। অলিম্পিকে অংশ নিয়ে সেন্ট লুসিয়ার কোনো অ্যাথলেট পদক জেতেনি। এবার স্বর্ণালী সাফল্য পেয়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপটি। যখন কিশোরী ছিলেন তখনইপরবর্তী উসাইন বোল্টহওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, এবার জিতে জুলিয়েন বলেছেন,‘স্বর্ণজেতার অনুভূতি বিস্ময়কর। সত্যি কথা বলতে আমি আজ সকালেও উসাইন বোল্টের স্প্রিন্ট দেখেছি। আমি দেখেছি তিনি কীভাবে এটি করছেন, তাকে দেখেই আমি বড় হয়েছি।

গত মাসেই মোনাকোয় ডায়মন্ড লিগে ১০.৮৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটারে জিতেছিলেন। গ্লাসগোয় হওয়া বিশ^ ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপস আসরে ৬০ মিটারে স্বর্ণ জিতেন প্রথম সেন্ট লুসিয়ান হিসেবে। অলিম্পিকেও একই সাফল্য পেয়েছেন নারীদের স্প্রিন্ট ইতিহাসের ৮ম সেরা টাইমিং গড়ে। নিজের সংগ্রামের কথা বলেন জুলিয়েন, কোনো জুতা ছাড়া খালি পায়ে দৌড়ানো, স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ে দৌড়ানো এবং এভাবে সব জায়গায় বিচরণের সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। এমনকি আমাদের সেভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধাও ছিল না।

নির্দিষ্ট কোনো স্টেডিয়ামও নেই। আশা করি এই স্বর্ণপদক সেন্ট লুসিয়ায় নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ খেলাটিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে। ড্রাগ নেওয়া, গাঁজা সেবনের জন্য টোকিও অলিম্পিকে নিষিদ্ধ শাক্যারির ফেরাটাও হয়েছে স্মৃতিময়। রৌপ্য জিতেছেন তিনি।

×