মিরপুর শেরেবাংলায় ড্র সিরিজের ট্রফি সামনে রেখে ফটো সেশনে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা
সুবর্ণ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের দিন নিউজিল্যান্ডকে অন্তত ২০০ রানের টার্গেট দেওয়ার কথা জানালেও মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন সেটি করতে পারেনি। মিরপুরে শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৪৪ রানেই গুটিয়ে যায়।
ঘূর্ণি জাদুতে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল একাই নেন ৬ উইকেট। ফলে মাত্র আগের দিনের সঙ্গে আর ১০৬ রান যোগ করতেই বাকি ৮ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ১৩৭ রানের লক্ষ্যে নেমে বিপাকে পড়ে নিউজিল্যান্ড ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। তবে শূন্য রানে গ্লেন ফিলিপস স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। তাই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর হাত ফসকেই বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় চলে আসা আরেকটি জয় বের হয়ে গেছে। সেই ফিলিপস ৪৮ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থেকে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন। তাই ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে দুই টেস্টের সিরিজ।
দুই টেস্টে ১৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজসেরা হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ফলে তৃতীয় চক্রের আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করল বেশ ভালোভাবেই। গত বছর দুই দলের মধ্যে হওয়া সর্বশেষ টেস্ট সিরিজও ১-১ সমতায় সমাপ্ত হয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে।
মিরপুরে দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর তৃতীয় দিন ফিলিপস একাই ৭২ বলে ৮৭ রানের যে টি২০ মেজাজের ইনিংস খেলেছেন তাতে করে নিউজিল্যান্ড ৮ রানের লিড পেয়েছে। দিনশেষে ২ উইকেটে ৩৮ রান নিয়েও অস্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। কারণ চতুর্থ দিন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে ব্যাটারদের এবং লড়াই করার মতো একটি টার্গেট দেওয়া জরুরি। দুই দলই তৃতীয় দিন শেষে সেই টার্গেট ২০০ প্লাস যথেষ্ট দাবি করেছেন। সেই লক্ষ্যটা স্থির করতে চতুর্থ দিন দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এই ইনিংসে প্রথম থেকেই সাবলীল জাকির হাসানকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ।
এজাজের বাঁহাতি স্পিনে একের পর এক আত্মসমর্পণ করেছেন মুমিনুল হক (১০), মেহেদি হাসান মিরাজ (৩), নুরুল হাসান সোহান (০) ও শরিফুল ইসলাম (৮)। মাঝে আরেক বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছেন ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম (৯) ও নাঈম হাসান (৯)। জাকির একাই এক প্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করার পথে তিনি তৃতীয় উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়েন। তখন মনে হয়েছে দারুণ এক অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুলের বিদায়সহ পরবর্তী ৮ উইকেটের পতন ঘটেছে মাত্র ৭১ রানে।
মাঝের ২৬ রানেই স্বাগতিকরা হারিয়েছে ৫ উইকেট! জাকিরও ৮৬ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায় ৫৯ রানে এজাজের শিকার হয়েছেন। ১৪৪ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। স্যান্টনার ৩টি ও এজাজ ১৮ ওভারে ৫৭ রানে ৬টি উইকেট নেন। ঠিক দুই বছর আগে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ে ভারতের বিপক্ষে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেন এজাজ। তারপর এই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন তিনি।
১৩৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে নামা নিউজিল্যান্ডকে শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। তিনি ডেভন কনওয়েকে (২) এলবিডব্লিউ করে দেন দলীয় ৫ রানে। এরপর বাঁহাতি পেসার তাইজুল ইসলাম ও অফস্পিনার মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে কিউইরা। দারুণ খেলা ওপেনার টম লাথামও ৬০ বলে ৩ চারে ২৬ রানে মিরাজের শিকার হন। এরপর ক্রিজে এসে নিজের মোকাবিলা করা দ্বিতীয় বলে স্লিপে ক্যাচ দেন ফিলিপস। কিন্তু মিরাজের বলে শান্ত সেই ক্যাচটি নিতে পারেননি।
শূন্য রানে জীবন পাওয়া ফিলিপসকে আর ঠেকানো যায়নি, তিনিই হারিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তিনি আর মিচেল স্যান্টনার সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৭০ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ফিলিপস ৪৮ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪০ রানে ও স্যান্টনার ৩৯ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। মিরাজ ৩টি ও তাইজুল ২টি উইকেট নেন।
মিরপুর টেস্টে মাত্র ১৭৮.১ ওভার খেলা হয়েছে, রান হয়েছে ৬৩৫। অর্থাৎ দিনে যত ওভার খেলা হয় সেই হিসেবে দুইদিনও হয়নি মিরপুর টেস্ট। তার মধ্যেই ফলাফল এসেছে। সিলেটে হওয়া প্রথম টেস্টে ১৫০ রানে জিতে যাওয়ার পর সিরিজ জয়ের আশা পূর্ণ হয়নি বাংলাদেশের। ৪ উইকেটের জয়ে ১-১ সমতায় সিরিজ শেষ করেছে কিউইরা। সিরিজে ১৫ উইকেট নিয়ে ৫ বছর পর আবার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তাইজুল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে প্রথমবার ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান সবচেয়ে বেশি ৫ বার সিরিজসেরা হয়েছেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে একাধিকবার সিরিজসেরা হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তাইজুল।