ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০

সিদ্ধান্তে অনড় স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সিদ্ধান্তে অনড় স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলাররা

সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে স্পেনের জেনিফার হারমোসো

২০ আগস্ট ২০২৩। সিডনির ফাইনালে পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে স্পেনের মেয়েরা। জয় করে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি। সেদিনই ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনা। ফাইনালে শেষ বাঁশি বাজার পর আনন্দের আতিশয্যে ফুটবলার জেনিফার হারমোসোর ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসেন স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান লুইস রবিয়ালেস। সেই থেকে স্পেন ফুটবলে টালমাটাল অবস্থা। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন জাতীয় দলসহ দেশটির নারী ফুটবলাররা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কর্তৃক সাময়িক নিষেধাজ্ঞার পর পদত্যাগ করেন রবিয়ালেস। বরখাস্ত হন কোচ হোর্হে ভিলদা। তাতেও শান্ত হননি ফুটবলাররা। এদিকে হাতে সময়ও বেশি নেই।

আগামী শুক্র ও মঙ্গলবার নেশনস লিগে সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। এই দুই ম্যাচের জন্য দল ঘোষণার তাড়া ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী দলের ২৩ জনসহ স্পেনের মোট ৩৯ নারী খেলোয়াড় নতুন করে বিবৃতি দেন, ফেডারেশনে ঢালাওভাবে পরিবর্তন না করলে তারা আর জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন না। তবে ফেডারেশনের দাবি ‘কিছু’ খেলোয়াড়কে তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, যারা অচিরেই ক্যাম্পে যোগ দেবেন।  
বিশ্বকাপের ফাইনালে আলোচিত সেই চুমু-কা-ের এক সপ্তাহ পরই জাতীয় দলসহ স্পেনের ৮১ নারী ফুটবলার সকল ধরনের ফুটবল খেলা থেকে বয়কটের ঘোষণা দেন।  এরপরই তৎকালীন কোচ হোর্হে ভিলদা বরখাকে বরখাস্ত করে স্পেন ফেডারেশন। কিন্তু ফুটবলাররা সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। গত শুক্রবার স্পেনের ২১ বিশ্বজয়ী ফুটবলারসহ ৩৯ নারী ফুটবলার যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা এখনো নিরাপদ মনে করছেন না।  ফেডারেশনে আর কোনো পরিবর্তন না করা হলে খেলবেনই না। এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই স্পেন নারী দলের নতুন কোচ হিসেবে মোন্তসে তোমিকে নিয়োগ দেয়া হয়। দুদিন আগেই তিনি নেশনস লিগের ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেন।

এই ১৫ জনই স্পেনের বিশ্বজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্য। দলে আছেন দুইবারের ব্যালন ডি অরী অ্যালেক্সিয়া পুতেলা। অবশ্য বাদ পড়েছেন আলোচিত হারমোসো। তবে দলে ডাক পেলেও ফুটবলাররা তাদের বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড়। ফুটপ্রোর মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এমন এক অবস্থায় ফেলা হয়েছে, যেখানে আমরা থাকতে চাইনি। রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে (আরএফইএফ) আমরা এরই মধ্যে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছি। আরএফএফ আমাদের কাছে যেসব আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলেছে, আমরা তা খতিয়ে দেখছি। আশা করি, তারা আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেবে।’ তাদের মূল দাবি পুরো ফেডারেশনকে ঢেলো সাজানো হোক।
সিডনির সেই ফাইনালে পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্পেনের মেয়েরা বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে।

এরপর পুরস্কারমঞ্চে স্পেনের খেলোয়াড় জেনি হারমোসোকে এক প্রকার জোর করেই ঠোঁটে চুমু দেন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান লুইস রবিয়ালেস। সেই চুমু-কা  নিয়ে স্পেন, তথা বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সেই ঝড়ের মুখে রবিয়ালেস বলেছিলেন, হেরমোসোকে দেওয়া তাঁর চুমু ছিল পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এবং বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। হেরমোসো অবশ্য বলেছেন, চুমুর বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে ছিল না। এর জেরে ফিফা রবিয়ালেসকে সাময়িক নিষিদ্ধ করে। পরে হারমোসোও তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং রবিয়ালেস পদত্যাগ করেন। বিষয়টির জন্য আদালতেও যেতে হয় রবিয়ালেসকে। চুমুকাে র পর প্রথমে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানের পদ থেকে রবিয়ালেস পদত্যাগ করতে চাননি।

কেননা তাঁর কাছে এটাকে গুরুতর মনে হয়নি। এরপরই তাঁর (রবিয়ালেস) ওপর বেশ ঝড় বয়ে যায়। ফিফা তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ে। এর প্রেক্ষিতে রবিয়েলসের মা অনশন পর্যন্ত ডেকেছিলেন। শুধু স্পেন নয়, গত কয়েক মাসে এই ঘটনা বিশ্ব ফুটবলেরই অন্যতম আলোচিত ইস্যুতে রূপ নেয়। খেলোয়াড়দের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারছে না স্পেন। অথচ একদিন পরই নেশনস কাপের ম্যাচ।