ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

শিরোপায় চোখ রেখে লড়বেন শামসুন্নাহাররা

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:২৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিরোপায় চোখ রেখে লড়বেন শামসুন্নাহাররা

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জিততে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা

বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে আগে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভারত। এখন আর ভারত কুলিয়ে উঠতে পারে না লাল-সবুজ বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের জায়গাটা এখন যেন নিয়েছে নেপাল। দুদলের সিনিয়র এবং বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট মিলিয়ে এ নিয়ে টানা তিনটি ফাইনালই এর বড় প্রমাণ (২০২২ সালে সিনিয়র সাফে বাংলাদেশ এবং একই বছরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপাল চ্যাম্পিয়ন হয়)। তিন নম্বর ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হবে আজ, বৃহস্পতিবার।

ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বনাম নেপাল ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। যারা জিতবে, তারাই হবে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাধারী। 
এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। আর নেপালের এটি দ্বিতীয় ফাইনাল। নেপাল জিতলে এটা হবে তাদের প্রথম শিরোপা। এবং সেই সঙ্গে নিতে পারবে ২০১৮ আসরের ফাইনালে এবং এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে হারার মধুর প্রতিশোধ। বাংলাদেশের অর্জন সর্বাধিক দুটি শিরোপা (ভারত জিতেছে একবার)। 
এই আসরে নেপালের বিরুদ্ধে এখনো অপরাজিত বাংলাদেশ। আগের তিন আসরের মোট ৬ ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই জিতেছে বাংলার বাঘিনীরা। ২০১৮ আসরে গ্রুপ পর্বে ২-১ গোলে, ফাইনালে ১-০ গোলে, ২০২২ আসরে গ্রুপ পর্বে ৪-২ গোলে এবং সেকেন্ড লেগে ২-১ গোলে নেপালকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২১ আসরে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে রুখে দেয় (০-০) নেপাল। এবার গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশে জিতেছে ৩-১ গোলে। 
এই আসরে বাংলাদেশ যেখানে ৮ গোল দিয়ে মাত্র ১টি গোল হজম করেছে, সেখানে নেপালও করেছে ৮ গোল। তবে খেয়েছে ৪টি গোল। আজ দলীয় লড়াইয়ের পাশাপাশি দুদলের দুই ফরোয়ার্ডও লড়বেন এককভাবে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে। বাংলাদেশের শামসুন্নাহার এবং নেপালের আমিশা কারকি উভয়েই করেছেন ৪টি করে গোল। দুজনেই করেছেন ১টি করে হ্যাটট্রিক। 
এবারের আসরে লিগ পর্বে প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৩-১ গোলে এরপর ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র এবং ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে সর্বোচ্চ ৭ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট পাওয়া নেপাল বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভুটানকে ৪-০ এবং ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসেছে নেপাল। ফাইনাল উপলক্ষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সম্মেলন কক্ষে। এতে উপস্থিত ছিলেন ফাইনানিস্ট দুদলের কোচ এবং অধিনায়ক।

বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘কালকের ফাইনাল ম্যাচ নিঃসন্দেহে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে। অবশ্যই নেপাল অনেক ভালো দল। গতকাল অসাধারণ খেলে তারা ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। এজন্য তাদের অভিনন্দন। আমার দলের মেয়েদের ধন্যবাদ তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফাইনাল পর্যন্ত উঠে লক্ষ্যপূরণ করতে পারায়। আর একটা ম্যাচ বাকি আছে। আশাকরি ফাইনালেও আমরা জিতব।’ 
ছোটন আরও বলেন, ‘নেপালের বিরুদ্ধে এই আসরে আমরা ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্বে ও ফাইনালে জিতেছিলাম। এখানেও গ্রুপ পর্বে তাদের হারিয়েছি। তাদের খেলা দেখেছি। ফাইনালে সেভাবেই তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা সাজাব এবং সেটা সফলভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করব। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলব। ফাইনালে নেপাল আমাদের প্রতিপক্ষ। আবার তারা গ্রুপ পর্বে আমাদের কাছে হেরেছে। তাই বলে তাদের খাটো করে দেখতে রাজি নই। তারা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই এ পর্যন্ত এসেছে।’ 
বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ দল পেনাল্টি শট মারতে গিয়ে ও টাইব্রেকারে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে একাধিকবার। আজকের ফাইনাল ম্যাচে যদি নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ড্র থাকে, তাহলে অতিরিক্ত সময় খেলা না হয়ে সরাসরি টাইব্রেকারে গড়াবে খেলা। টাইব্রেকারে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কি? ‘পেনাল্টি মিস খেলারই অংশ। এবারের কাতার বিশ^কাপে অনেক তারকা ফুটবলারই পেনাল্টি মিস করেছে। এই আসরে রিপাও একটা মিস করেছে। এটা হতেই পারে। তবে আমরা টাইব্রেকারের জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’
সবশেষে ছোটন জানান তার দলে দলের কোন কার্ড ও চোটজনিত সমস্যা নেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমরা ফাইনালে উঠেছি। কাল আমাদের ম্যাচ। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন জিততে পারি। প্রথম ম্যাচে আমরা নেপালের সঙ্গে যেভাবে খেলেছিলাম, ফাইনালেও সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব। আমাদের লক্ষ্য ছিল ফাইনাল। এখন ফাইনালে চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করতে এবং দলকে শিরোপা জেতাতে। যদি মনে হয় আমার চেয়ে সতীর্থদের গোল করার সুযোগ বেশি, তাহলে নিজে গোল না করে তাদের দিয়েই গোল করাব। শুধু কাপটা আমাদের চাই। সেভাবেই খেলতে চাই।’ 
নেপালের কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং বলেন, ‘অবশেষে আমরা ফাইনালে। ফাইনালে জিতে আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে খেলেছি, ফাইনালে সেভাবে খেলব না। সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলে খেলব। আমরা যথেষ্ট অঅত্মবিশ^াসী।’ নেপাল অধিনায়ক প্রীতি রায় বলেন, ‘ফাইনালটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হবে। আমরা আত্মবিশাসী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে। আমাদের কষ্টের ফল পাব আশা করি।’

×