
সাব্বির রহমান
চমকে ভরা এশিয়া কাপের দলে বড় চমক সাব্বির রহমান। হাতে প্রচুর স্ট্রোক, যে কোন পরিস্থিতিতে পিটিয়ে খেলতে সক্ষম- প্রতিভার ডানায় ভর করে ২০১৪ সালে টি২০ দিয়ে জাতীয় দলে পা রাখেন। দারুণ কিছু ইনিংসও আছে নামের পাশে। কিন্তু পারফর্মেন্সে ধারাবাহিকতার অভাব, মাঠের বাইরে অখেলোয়াড় সুলভ আচরণ তার সেই প্রতিভাকে পূর্ণতা পেতে দেয়নি। অধিনায়ক-ম্যানেজমেন্ট থেকে পাওয়া অতিরিক্ত ভালবাসার মূল্য দিতে পারেননি।
এবার প্রায় তিন বছর পর ডাক পেয়েছেন। মাঝের এ সময়ে আহামরি কিছু করেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছুটা যা রান করেছেন, সেও পঞ্চাশ ওভারের ফরমেটে। এরপরও তাঁকে এশিয়া কাপের জন্য টি২০ স্কোয়াডে ফেরানো হয়েছে। স্বভাবতই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সে সবে কান না দিয়ে ৩০ বছর বয়সি ডানহাতি ব্যাটসম্যান পাওয়া সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চান। প্রত্যাবর্তনে নতুন শুরুর যাত্রাটা করতে চান চলতি উইন্ডিজ সফর দিয়ে। সেন্ট লুসিয়ায় স্বাগতিক এ- দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ- দলের হয়ে আজ প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামবেন সাব্বির।
‘হেড কোচ আমাদের পরিকল্পনা দেবেন। উনি যে পরিকল্পনা দেন, সেটা মেনেই খেলার চেষ্টা করব। কিভাবে ম্যাচ জেতা যায়, কিভাবে নিজের খেলায় আরও উন্নতি করা যায়, কিভাবে এখানে (উইন্ডিজ) ভাল করতে পারি, সেই চেষ্টা থাকবে। শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করব ইশাল্লাহ।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বোর্ডের (বিসিবি) আপলোড করা এক ভিডিও বার্তায় বলেন সাব্বির। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর দল থেকে বাদ পড়েন।
বিপিএলের সেই মৌসুমে ১১ ইনিংসে একটিমাত্র হাফ সেঞ্চুরি। ১১২.০৮ স্ট্রাইক রেট ও ১৮.৫৪ গড়ে করেন ২০৪ রান। করোনা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে ৭ ম্যাচে রান মাত্র ১০৬। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ টি২০তে ১২ ইনিংস খেলে নেই কোনো হাফ সেঞ্চুরি। ১০৪.৫৬ স্ট্রাইক রেটে রান ২২৯। সর্বশেষ বিপিএলে ৬ ম্যাচে ১৮.১৬ গড়ে মাত্র ১০৯ রান করার পর তো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স স্কোয়াডেই জায়গা হয়নি।
এরপরও তাঁকে এশিয়া কাপের দলে রাখার যুক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। সর্বশেষ ৫০ ওভারের ডিপিএলে অবশ্য প্রায় ৪০ গড়ে এক সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে করেন ৫১৫ রান। স্কিল ও ফিটনেসে উন্নতি এনে সুযোগ পান বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে। নান্নুর দাবি সেখানে বেশ উন্নতি করেছেন সাব্বির।
ফরমেট ভিন্ন হলেও আত্মবিশ্বাসী সাব্বির, ‘সংস্করণ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফর্মে থাকাটাই বড় ব্যাপার। আমি যখন টি২০ থেকে বাদ পড়লাম তখনও কিন্তু ওয়ানডেতে পারফর্মেন্স ভাল ছিল। এরপরও ওয়ানডে থেকে বাদ পড়ি। এখন আবার উল্টো হয়েছে। ৫০ ওভারে ভাল করে টি২০তে ডাক পেয়েছি। সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া কাপের জন্য মুখিয়ে আছি।’ ক্যারিয়ারে ১১ টেস্ট ও ৬৬ ওয়ানডে খেলা সাব্বির টি২০ খেলেছেন ৪৪টি। চার হাফ সেঞ্চুরিতে প্রায় ২৫ গড় ও ১২০ স্ট্রাইক রেটে রান ৯৪৬।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বেশ পছন্দের ছিলেন। তার অধীনেই ছিলেন সবচেয়ে সফল। ২৭ ম্যাচে ১২২ স্ট্রাইক রেটে ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩১ গড়ে করেন ৬৯৭ রান। সাব্বির এবার খেলবেন সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। তার অধীনেও খারাপ করেননি। ৯ ম্যাচে ১৯ গড়ে ১ হাফ সেঞ্চুরিসহ রান ১৬৭। তবে সাকীবের অধীনে তার স্ট্রাইক রেট সর্বোচ্চ ১২৬। এটা নাকি স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য। ‘সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে তো সবারই ভাল সম্পর্ক। তার সঙ্গে আমার জুটিটা ভাল হয়, আমরা দুজনই স্বাধীনভাবে খেলতে পছন্দ করি। আশা করি এবারও সেটা ভালভাবে পাব। আর জাতীয় দলে তো কারও জায়গা পাকাপোক্ত থাকে না, সবসময় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চেষ্টা থাকবে শতভাগ দেয়ার।’
সদ্যই জিম্বাবুইয়ে সফরে টি২০’র নেতৃত্ব পাওয়া নুরুল হাসান সোহান জানিয়েছেন, এই ফরমেটে বাংলাদেশ ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চায়। পুরণো সাব্বির নতুন রুপে ফিরলে এশিয়া কাপে তিনি হতে পারেন তুরুপের তাস। ‘এটা ঠিক টি২০তে ভয়ডরহীন ব্যাটিং জরুরী। তবে অন্ধের মতো মেরে লাভ নেই, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলব। সেটা ভয়ডরহীন বা স্বাধীন যেভাবেই হোক।’ মোহাম্মদ মিঠুনের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি চারদিনের আনঅফিসিয়াল টেস্টই ড্র করেছে বাংলাদেশ।
একই ভেন্যু সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে আজ। পরের দুই ম্যাচ ১৮ ও ২০ তারিখ। ওয়েস্ট উইন্ডিজ থেকে ফিরে আগামী ২৭ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হতে যাওয়া ১৫তম এশিয়া কাপের টাইগার বহরে যোগ দেবেন সাব্বির।