টেস্ট সিরিজের ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা
২২ বছর আগে বিশ্বের দশ নম্বর দল হিসেবে টেস্ট মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ দল। এ মাসেই সেই খবরটা পেয়েছে (২৬ জুন, ২০০০) বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ঠিক ২২ বছর ১ দিন হতেই লজ্জার এক অভিজ্ঞতা। ১৩৪তম টেস্ট খেলতে নেমে ১০০তম হার দেখেছে বাংলাদেশ দল। লড়াই শুরুর আগেই পূর্ব ঘোষণা অনুসারে সফরকারীদের ২ টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিন মাত্র ৫৬.৩ ওভার খেলা না হলে হয়তো পরাজয়টা সেদিনই দেখত বাংলাদেশ। কিন্তু প্রকৃতির বৈরিতায় মাঠ খেলার অনুপযুক্ত থাকায় চতুর্থ দিন শেষ বিকেল পর্যন্ত হারের লজ্জা পেতে হয়নি। ইনিংস পরাজয় এড়াতে ৪২ রান প্রয়োজন তখনও, ৪ উইকেট হাতে বাকি।
অবিরাম বৃষ্টিতে অনুপযুক্ত মাঠ সারাদিনের চেষ্টায় চতুর্থ দিন চা বিরতির সময় প্রস্তুত হয়েছে। তারপর মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের লড়াই, নুরুল হাসান সোহানের ঝড়োগতির হার না মানা ৬০ রানে ইনিংস পরাজয় এড়িয়ে ১২ রানের লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। অনায়াসেই বিনা উইকেটে ১৩ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্যারিবীয়রা। এ্যান্টিগা টেস্টে ৭ উইকেটে জয় পায় তারা। সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পরাজয়টা আগেই অনেকখানি নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। ১৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৬ উইকেটে বাংলাদেশ ১৩২ রান তোলার পর শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতার। তৃতীয় দিনই হতে পারত ফয়সালাটা।
কিন্তু কয়েক দফা বৃষ্টির ধাক্কায় খেলা হয়েছে এদিন মাত্র ৫৬.৩ ওভার। এর মধ্যে মাত্র ৩৬ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ এবং তাতেই বিপর্যস্ত হয়। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪২ রানে পিছিয়ে থাকা দল ইনিংস হার এড়াতে পারবে কিনা সেটাই ছিল একমাত্র দেখার বিষয়। চতুর্থ দিন সেজন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে চা বিরতির পর পর্যন্ত। সারাদিন মাঠ প্রস্তুত করতেই কাটিয়ে দিয়েছেন গ্রাউন্ডসম্যানরা। চা বিরতির পর খেলা শুরু হলে মাত্র ৭০ মিনিট খেলা হয়েছে (মাঝে ১০ মিনিট ইনিংস বিরতি ছিল)। বাংলাদেশ দল ৪৮ মিনিটেই বাকি ৪ উইকেট হারিয়েছে।
মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ রান করতেই আলজারি জোসেফের শিকার হন। এরপরই করণীয় বুঝতে পেরেছেন সোহান, ব্যাট চালিয়েছেন টি২০ মেজাজে। কারণ আর কোন স্বীকৃত ব্যাটার নেই এবং ইনিংস হার এড়াতে তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬ রান। অবশ্য শুরু থেকেই তিনি আক্রমণাত্মক ছিলেন, মিরাজ আউট হওয়ার পর মাত্র ৪০ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান তিনি। আর বাংলাদেশও এড়িয়ে যায় ইনিংস হারের শঙ্কা। তবে এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। তাই ৫০ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৬০ রানে অপরাজিত থাকতে হয়েছে সোহানকে।
সোহানের দুর্দান্ত ফিফটিতে ইনিংস হারের লজ্জা এড়িয়ে ১২ রানের লিড পায় বাংলাদেশ ১৮৬ রানে গুটিয়ে গিয়ে। ২০০৪ সালে এই মাঠে প্রথমবার খেলে ৪১৬ ও ৯ উইকেটে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটে তখন সবে চতুর্থ বছরে তারা। সেই দলটি টেস্ট ক্রিকেটে ২২ বছর পেরিয়ে ১৮ বছর আগের পারফর্মেন্সটাই ছুঁতে পারেনি। সেবার ড্র করে। এবার ১০ উইকেটে হারতে হয়েছে। যদিও ১৩ রানের লক্ষ্যে নেমে খালেদের দারুণ বোলিংয়ে জন ক্যাম্পবেল ক্যাচ দিয়েছিলেন, ফাইন লেগে সেই ক্যাচ ধরতে পারেননি এবাদত হোসেন।
সেই এবাদতকেই চার হাঁকিয়ে দলকে ১০ উইকেটের অনায়াস জয় এনে দেন ৯ রানে অপরাজিত ক্যাম্পবেল। এই ভেন্যুতে হওয়া ১০ টেস্টে এটি উইন্ডিজের দ্বিতীয় জয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশকেই হারিয়েছিল তারা। এবারও হারাল তাদের। এছাড়া ৪ টেস্ট এখানে সফরকারীদের কাছে হারা উইন্ডিজ ড্র করেছে বাকি ৪টি। ২২ বছরে ১৩৪ টেস্টে হারের সেঞ্চুরি পূর্ণ করল বাংলাদেশ বিশ্বের নবম দল হিসেবে। অথচ দশম দল হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পায় তারা। বাংলাদেশের আগে থেকে টেস্ট অঙ্গনে পা রাখা জিম্বাবুইয়ে এখনও হারের শতক পূর্ণ করেনি। ১১৫ টেস্ট খেলে তারা ৭৪ হার দেখেছে মাত্র। জিতেছে ১৩টি, ড্র করেছে ২৮টি।
তাদের পরাজয়ের হার ৬৪.৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পরাজয়ের হার সেখানে ৭৪.৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে অষ্টম দল হিসেবে শততম টেস্ট হার দেখা দল শ্রীলঙ্কা। তবে তারা ৩০৩ টেস্ট খেলে হেরেছে মাত্র ১১৫ ম্যাচ যার হার ৩৭.৯৫ শতাংশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক ২০ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ এবং এ নিয়ে হারল দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৩ ম্যাচ। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ২৪টি। সর্বাধিক ১৮ টেস্ট হেরেছে তাদের বিপক্ষেই। টেস্ট ক্রিকেটে ২২ বছরে মাত্র ১৬ জয় পাওয়া বাংলাদেশ দল কতদিনে উন্নতি করবে এই ফরমেটে তা অনিশ্চিত। কারণ দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কাঠামো অনুন্নত। তাছাড়া টেস্ট যারা খেলছেন তারা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ নিয়মিত খেলেন না।