স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক দল ১৯ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। টেস্টের কুলিন দেশগুলোকেও হারিয়েছে। দলটি বাংলাদেশ। আরেকদল টেস্টে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এক বছরের টেস্ট ইতিহাস। দলটি আফগানিস্তান। ১৯ বছরের টেস্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দলের বিরুদ্ধে ১ বছরের অভিজ্ঞতায় থাকা দল খেলবে। ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার একমাত্র টেস্টটি শুরু হবে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশেরই টেস্টটিতে এগিয়ে থাকার কথা। আধিপত্য বিস্তার করেও খেলার কথা। জেতারও কথা। বাংলাদেশ তা করে জিতবেও। শনিবার ফিল্ডিং অনুশীলনের সময় আঙ্গুলে চোট পেয়েছেন স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন-চারদিন বিশ্রাম নিলেই খেলার জন্য ফিট হয়ে উঠবেন। তিনিই রবিবার বলেছেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা ডমিনেট (আধিপত্য বিস্তার) করে খেলার চেষ্টা করব। সে রকম আমরা কাজ করছি। ওদের থেকে আমরা অনেক এগিয়ে থাকব।’ বাংলাদেশ এই ১৯ বছরে ১১৪টি টেস্ট খেলে ফেলেছে। সেখানে আফগানিস্তান গত বছর টেস্ট মর্যাদা পেয়ে মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছে। আবার খেলাটি হবে বাংলাদেশের মাটিতে। স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেয়ার কথা। যেমনটি আফগানরা যে প্রথম টেস্ট খেলেছে, সেটি ভারতের বিরুদ্ধে উড়ে গেছে। বাংলাদেশেরও উড়িয়ে দেয়ার কথা। তবে এতটা ছোট্ট করে আবার আফগানিস্তানকে দেখতে চান না মিরাজ। শ্রদ্ধা রেখে প্রতিটি ম্যাচেই চ্যালেঞ্জ দেখছেন। সঙ্গে বাংলাদেশ যে আসলেই এগিয়ে সেটিও বুঝিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আসলে প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জ। ছোট আর বড় ব্যাপার না। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে যারাই ভাল খেলবে তারাই কিন্তু জিতবে। কিন্তু তারপরও আমরা কিন্তু ওদের থেকে অনেক এগিয়ে আছি; অভিজ্ঞতার দিক থেকে, শেষ যে টেস্টটায় আমরা পারফর্ম করেছি সেই বিবেচনায় এবং হোম কন্ডিশনের বিবেচনায়। ওদের থেকে অনেক দিক থেকেই এগিয়ে আছি। তারপরও যতই এগিয়ে থাকি যতই অভিজ্ঞতা থাকুক আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে, আমাদের সবাইকে পারফর্ম করতে হবে। যার যার জায়গায় ইন্ডিভিজুয়ালি পারফর্ম করতে হবে। আর আমরা যদি পার্টিকুলার এরিয়াতে পারফর্ম করি তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’ সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজরা বিগত দিনগুলোতে স্পিন সহায়ক উইকেট পেয়ে প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলেছেন। এমনকি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও হারিয়েছেন। এবার চট্টগ্রামে স্পিন সহায়ক উইকেটের পরিবর্তে ট্রু উইকেট বানানোর কথা বলা হচ্ছে। যেখানে ব্যাটিংটাও যেমন ভাল হবে। পেস আক্রমণও উইকেটের সহায়তা পাবে। কিন্তু স্পিনারদের জন্য সুবিধা কম থাকতে পারে। কারণ আফগানিস্তান দলে রশীদ খান, মোহাম্মদ নবীদের মতো স্পিনাররা রয়েছেন। স্পিন উইকেট দিলে যদি রশীদ, নবীরা বিপদ তৈরি করে ফেলেন। যে কোন উইকেটের জন্যই প্রস্তুত মিরাজ। এমনটিই জানিয়েছেন, ‘স্পিনার হিসেবে আমরা সব কন্ডিশনেই খেলতে অভ্যন্ত। আমাদের যে উইকেটই দিক না কেন আমরা প্রস্তুত। যেটা আসলে দলের জন্য, আমাদের জন্য ভাল হয়। নট অনলি স্পিন বা পেস বা ব্যাটিং উইকেট। আসলে টেস্ট ক্রিকেট সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে হয়। যে টাইপের উইকেটই হোক না কেন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আমরা।’ চট্টগ্রামের উইকেট যতই স্পোর্টিং করে তৈরি করা হোক স্পিনতো ধরবেই। তা যেন মিরাজেরও জানা।
টেস্ট ক্রিকেটে বেশিদিন হয়নি আফগান ক্রিকেটারদের। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে লাগে ধৈর্য। বিশেষ করে বোলিংয়ে এক জায়গায় বল করেই যেতে হয়। এ ধৈর্য কী টেস্টে দেখাতে পারবে আফগানরা? মিরাজ বলেন, ‘এক জায়গায় কতক্ষণ বল করতে পারা যায় সেটাই আসলে বোলারদের ধৈর্য। ওরা কতটুকু করবে বা কতটুকু প্রস্তুতি নেবে, তারাই ভাল জানে। তবে আমি মনে করি ওদের থেকে আমরা অনেক এগিয়ে আছি টেস্ট ক্রিকেটে এবং আমরা শতভাগ দিতে পারলে হয়তো ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে।’
ওয়ানডে কিংবা টি২০তে আফগানিস্তান ভয়ঙ্কর দল। তা সবাই জানে। দলের ক্রিকেটাররাও আতঙ্ক যে কোন সময় তৈরি করতে পারে। কিন্তু টেস্টে তো আর নির্ধারিত ওভারের ক্রিকেটের মতো খেললে চলে না। এখানেই বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকছে। মিরাজ তাই মনে করেন, ‘ওদের (আফগানিস্তান) থেকে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাটা অনেক ভাল। ওরা ওয়ানডে, টি২০তে রান বাঁচিয়ে বোলিং করে। তারা বিভিন্ন জায়গায় বল করে থাকে। এটার জন্য হয়তো ব্যাটসম্যান অনেক সময় আক্রমণ করে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তো তেমন ব্যাপার নেই যে, জোর করে মারা বা আক্রমণাত্মক খেলা। এখানে যতক্ষণ ভাল বল করবে ততক্ষণ দেখে শুনে খেলবে, একটি খারাপ বল করলে সেটিকেই মারবে। এটাই আসলে টেস্ট ক্রিকেট।’
শনিবার ডান হাতে অনামিকায় চোট পেয়ে স্ক্যান করানো হয়। আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ পরানো হয়। তবে কোন চিড় ধরা পড়েনি। তাতেই বোঝা যাচ্ছে কোন বিশেষ সমস্যা নেই। দ্রুতই আবার মাঠে ফিরবেন মিরাজ। ২৮ আগস্ট প্রস্তুতি ক্যাম্প শেষ হচ্ছে। এরপর ৩০ ও ৩১ আগস্ট লাল ও সবুজ দলে দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে দলের ক্রিকেটাররা। সেই ম্যাচেই হয়তো মিরাজকে দেখা যেতে পারে। মিরাজও আশায় আছেন। মিরাজ জানান, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আঙ্গুল ভাল আছে। ওই রকম বড় কোন সমস্যা হয়নি।
হয়তো তিন-চারদিন বিশ্রাম নিলে ভাল হয়ে যাবে। এটা ঠিক অনুশীলন করতে পারছি না তাই কষ্ট লাগছে। তবে এই কয়দিনের বিশ্রাম নিলে শারীরিক ফিটনেসটা আরও বাড়বে।’ এখন প্রস্তুতিতে না থেকেও কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে ফিট হয়ে একাদশে ঠিকই মিরাজ থাকবেন। তা নিশ্চিতই। আর খেলে আফগানিস্তানকেও নিশ্চয়ই স্পিন বিষে ডুবিয়ে দিবেন? সেই চেষ্টা তিনি করবেনই। তবে সবার চেষ্টাতেই জয় মিলবে। সেই জয় আধিপত্য বিস্তার করেই যে বাংলাদেশ চায় তা বোঝাই যাচ্ছে।